কল্লোল-গীতি

কুলু কুলু কুলু নদী ব’য়ে যায় রে ভাই!
তীরে ব’সে ভাবছ বুঝি কি বলে ছাই?
তা’ নয়, তোরা ভাল ক’রে শুন্‌বি যদি, কাছে আয়,
ভারি একটা মজার গান নে’চে নে’চে গেয়ে যায়,
সবারি কি আছে কাণ? কেমন ক’রে শুনবে গান?
যেমন নাচে, তেমনি গায় সে,-
কোথায় লাগে নাটক, যাত্রা, খেমটা্‌, বাই?
নদী বলে “আমি মস্ত গিরি-রাজার মেয়ে গো,
বাবা তো নামান না মাথা, কারো কাছে যেয়ে গো,
নিশিদিন উর্ধ্বে চান, মেঘে তাঁরে করায় স্নান,
যোগি-ঋষিদের দেন স্থান,-
নিজে মহাযোগী, বাহ্যজ্ঞান তো নাই।
‘তরঙ্গিণী’ নামটি বাবা আদর ক’রে দিয়েছে,
একাগ্রতা, একনিষ্ঠা, যতনে শিখিয়েছে,
বাবার কাছে সাগরের, রূপগুণ শুনেছি ঢের
তাইতে স্বরম্বরা হ’তে-
সে প্রশান্ত সাগর পানে ছুটে’ যাই।
কূলে তোরা সংসার পে’তে, মায়ায় ভুলে রয়েছিস্,
কত ফল, আর ফুলের বাগান, দালান কোঠা করেছিস্,
আমি গিয়ে লাগাই গোল, পেতে দি’ এই নিঠুর কোল,
একটি মাত্র কূল রাখি, আর-
কাঁদিয়ে তোদের, আর এক কূলের মাথা খাই।
আমার সঙ্গে পার্‌বি তোরা? আমায় ধরে’ রাখবি কেউ?
কি টানে টেনেছে আমায়, উঠ্‌ছে বুকে প্রেমের ঢেউ,
(আমার) প্রাণের গানে সুধা ঢে’লে
প্রাণের ময়লা নীচে ফে’লে,
বাধা ভে’ঙ্গে চূ’রে ঠে’লে,-
কেমন ক’রে যাচ্ছি চ’লে দেখ্‌ না তাই!”

বাউলের সুর- কাহারোবা।