শেষ দিন

যেদিন উপজিবে শ্বাসকষ্ট;-
বায়ু-পিত্ত-কফের নাড়ী হ’য়ে ক্ষীণ,
হবে নিজ নিজ স্থান-ভ্রষ্ট।
ইচ্ছাশক্তির ক্রিয়া থাক্‌বে না হাত-পায়ে,
রসনা হবে আড়ষ্ট;
যকৃৎ, প্লীহা, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী,
মূত্রাশয় হবে দুষ্ট;
বাইরের প্রতিবিম্ব, প’ড়্‌বে না নয়নে,
হবি কাল-তন্দ্রাবিষ্ট;
কাণের কাছে কামান দা’গ্‌লে শুন্‌বি নারে,
প’ড়ে রইবি যেন সরল কাষ্ঠ।
গায়ে ঠে’সে ধ’র্‌লে জ্বলন্ত অঙ্গার,
‘উহু’ বল্‌বি না নিশ্চেষ্ট;
কেবল, বুকের কাছে একটু থাক্‌বেরে ধুক্‌ধুকি;
আর, ঈষৎ নড়্‌বে শুষ্ক ওষ্ঠ।
মাথা চিরে দিবে সদ্য কালকূট,
কিন্তু হায়রে, বিধাতা রুষ্ট;
শেষ ঔষধের ক্রিয়া বিফল হ’লে, বৈদ্য
জবাব দিয়ে যাবে স্পষ্ট।
দাসদাসী-পত্নী-পুত্র-পুত্রবধূ-
-আদি পরিজনজুষ্ট,-
মল-মূত্রে, কফে, জ’ড়ে প’ড়ে রবে,
এই, সোণার শরীর পরিপুষ্ট।
“ধনে প্রাণে বিনাশ ক’রে গেলে,” ব’লে,
কাঁদ্‌বেন পুত্র পিতৃনিষ্ঠ;
আর আমরণ বৈধব্যের ক্লেশ ভে’বে পত্নী,
কাঁদ্‌বেন পার্শ্ব-উপবিষ্ট।
পণ্ডিতেরা বল্‌’বেন, “প্রায়শ্চিত্ত করাও,
একটু, রক্ত হয়েছিল দৃষ্ট;
একটা গাভী এনে, ত্বরা করাও বৈতরণী,
বাঁচামরা সব অদৃষ্ট!”
ঘরে, তেল, চূর্ণ, চটি, পাচন, প্রলেপ, বটী,
কবল, ঘৃত, আর অরিষ্ট;
তুলসী, বেলের পাতা, মধু, পিঁপুল, আদা,
সবি বিফল, সবি নষ্ট।
কান্ত বলে, ভ্রান্ত মনরে, বলি শোন্,
এখন, লা’গছে না এ কথা মিষ্ট;
কিন্তু, সকল সত্যের চেয়ে, এইটে সত্যি কথা,
দিনতো গেল, ভাবরে ইষ্ট।

বসন্ত মিশ্র- একতালা।