সিন্ধু-সঙ্গীত

নীল সিন্ধু ওই গর্জ্জ্জে গভীর;
ভৈরব-রাগ-মুখর করি’ তীর!
অচল-উচ্চ-চল-উৰ্ম্মি মালশত-
-শুভ্র-ফেন-যুত, রঙ্গ অধীর;
ভীতি বিবর্দ্ধন, তাণ্ডব নৰ্ত্তন,
ভীম রোলে করি শ্রবণ বধির।
সিন্ধু কহে, “তব ভূমি খণ্ড কত
ক্ষুদ্র, হের মম বিপুল শরীর;
তীব্র হরষে, মম অঙ্গ পরশে,
কি তরঙ্গ তুলিয়া, চির-সঙ্গি-সমীর!
রত্ন-রাজি কত, যত্ন-সুরক্ষিত,
সঞ্চিত কোষ লুবধধরণীর;
সার্থকতা লভে মুগ্ধ তরঙ্গিণী,
আসি’ পদে মিলি’, পতি জলধির!
(আমি) ইন্দ্ৰ-চাপ-নিভ-স্নিগ্ধ-মনোহর-
-বর্ণে সুরঞ্জিত, কিরণে রবির;
পারিজাত তরু, অমৃত, সুধাকর,
মন্থনে তুলিল সুরাসুর বীর।
(কত) অর্ণবপোত পণ্য ভরি’ ধাইছে,
কর্ণে সুপরিচিত নাবিক ধীর;
ভগ্ন-শেষ কত, করিছে প্রমাণিত,
ধ্রুব-পরিহাস নিঠুর নিয়তির।
(যবে) অমৃত-ধারে ভরি’ পিতৃবক্ষ, হয়
উদয় মনোরম পূর্ণ শশীর;
মত্ত-হরষে, যেন বীচি-হস্তে ধরি’,
আনি’ আলো করি হৃদয়-কুটীর।
চন্দ্র-বিরহে পুনঃ উদ্বেলিত চিত,
আবৃত করে ঘন-দুঃখ-তিমির;
করি, সজ্জিত, সুন্দর, প্রচুর-পুষ্প-ফল-
-শস্য-রাশি দিয়ে, দেহ মহীর।
লক্ষ-পুরাতন-সন্ধি-সমর-ইতি-
-হাস-বিমিশ্রিত এ বিপুল নীর
দীনে দান কত করিনু অকাতরে,
সম্পদ লয়ে গর্ব্বিত নৃপতির।
(তব) শক্তিপুঞ্জ মম মূর্ত্তি হেরি’,
হয় স্তম্ভিত, ভীত, পদানত-শির;
সর্ব্ব গর্ব্ব মম যাঁর কৃপাবলে,
নমি সে সুমঙ্গল-পদে প্রভুজীর।

মিশ্র গৌরী- কাওয়ালি।