বিশ্বাসের হাতিয়ার

নষ্ট সময়- নষ্ট প্রহর
নষ্ট শশা-র পচনের মতাে গলিত জীবন।
মাজরা পােকায় খেয়ে যাওয়া ধান তরুন শস্য
নমস্য কিছু প্রবীন পথিক
আজো বােসে আছে পচা পুরাতন বটের শিকড়ে।

মৌশুম যায়-অনাবাদি জমি প’ড়ে থাকে চাষহীন,
লাঙল আসে না, আসে নর্তকী খেমটা নাচনে ধেয়ে।
ধেনােমদ চায় বিদেশী বনিক, ধান চায় স্বদেশীরা-

শিরা উপশিরা ধমনী-রক্তে কারা বুনে যায় রােগ
কারা লালনের বাউল কন্ঠে সােনালি শিকল বাঁধে?
কারা সেই প্রতারক!
কারা এ-মাটির পুষ্পকে বলে পাপ?

কোটি কোটি বুক এক বুকে মিশে আছে,
জয়ন্তিয়ায়-খাশিয়া পাহাড়ে-পদ্মার ভাঙা পাড়ে
হাজার বছর যে-মানুষ শুধু লড়েছে কঠিন প্রানে
যে-মানুষ হাড়ে লবনের ঘ্রান, বুকে সমুদ্র-ঝড়
বােদ্দুরে পােড়া চামড়ায় যারা মেখেছে পলির কাদা,
আজ তারা আসে গর্জনে ঘন বর্ষনে, কাঁপে মাটি!

বাজ-পােড়া তরু ঘরের দুয়ােরে,
কুকুরে শকুনে টেনে ছিঁড়ে খায় মায়ের শরীর এই জনপদে,
ঠেকাতে পারি না-কণ্ঠ বাহুতে ঝুলে আছে তালা রাজার এনাম।

আমার পরান প্রিয় এই চর, এই শস্যের মাটি,
ওরা চায় তাকে মরুভূমি আর শ্মশান বানাতে,
তমাল শিরীষ কেটে তাই ওরা বুনেছে খােরমা তরু
এই পলিমাটি চরে।

কোটি কোটি বুক এক বুকে আছে মিশে,
অস্থিতে মাখা তিতুমীর আর সুর্যসেনের লােহু,
অশােকের ঘন ছায়ার মতােন মায়ের প্রেরনা বুকে
কারে তোর এতাে ডর?
কার ডরে তাের পাথর-কঠিন সিনা হয়ে আছে নত?

গেরামের পর গেরাম উঠছে জেগে
শস্যের মাঠে লাঙলের কোলাহল
খুনীর অঙনে বাজে প্রতিশোধ মত্ত মাদল
জাগে সমতার পূর্ব লড়াই, পূর্বাভাসের বাঁশি।

কোথায় পালাবে?
মানুষ চিনেছে মুখােশের মুখ, মানুষ চিনেছে শত্ৰু,
হাতে হাতিয়ার বুকে বিশ্বাস ওই দ্যাখাে ওরা আসছে।

২৬.০১.৭৭ সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।