সে মাঝরাতে স্টিমার থেকে নামবে। সদরঘাটে।
তার পরনে থাকবে মলিন আকাশি রঙের প্যান্ট,
ধুসর জামা আর পায়ে থাকবে বাটা কোম্পানির চটি।
এক থোকা আমলকির মতো তার বুকে থাকবে
এক থোকা মেঘ। শ্যামল স্বপ্ন। তার গা থেকে
ধানের গন্ধ আসবে।
উড়নচণ্ডি চুল থেকে আসবে লজ্জাবতী লতা
আর ঘাসের গন্ধ। তার দৃষ্টি থাকবে এলোমেলো।
কিছুটা উদাসিন। কোথাও যেন স্থির নয়-
কোন কিছুতেই।
তার চিবুকে থাকবে প্রজাপতির ডানার
গৌরব আর ঔদ্ধত্য।
এই মাঝরাতে সে উদ্দেশ্যহীন হাঁটতে শুরু করবে।
বিদেশি ঋনের টাকায় তৈরি মসৃন
রাস্তার উপর দিয়ে
সে হাঁটতে থাকবে। তার পায়ে বহুজাতিক
কোম্পানির সিল মারা মলিন পাদুকা।
এই মহানগরীতে সে বহিরাগত-
আগন্তুক।
আমরা তাকে অনুসরন করতে থাকবো। কারন,
আমরা জানতে চাইবো, বুঝতেও চাইবো
এই আগন্তুকের উদ্দেশ্যহীন ভ্রমনের অর্থ।
যেহেতু তার চোখ ইতস্তত এবং বিক্ষিপ্ত
যেহেতু তার পদক্ষেপ খুব বেশি দৃঢ় নয়
যেহেতু তার মুখে এক ধরনের সরলতার ছায়া
যেহেতু তার কোন ভঙ্গিতেই
চতুরতা প্রকাশ পায় না
একারনেই আমরা তার ভ্রমনের আগে
উদ্দেশ্যহীন শব্দটি ব্যবহার করবো।
সে হাঁটতে থাকবে…
আমাদের তাত্বিকবৃন্দের কেউ কেউ
তাকে নিম্নমধ্যবিত্ত বোলে
শনাক্ত করতে চাইবে, বাকিরা অন্য অভিধায়।
তাত্বিকদের এই বিতর্ক ভীষন দীর্ঘ হতে থাকবে।
আমাদের নেতৃবৃন্দের ভেতর ইতিমধ্যে
মতের পার্থক্য দ্যাখা দেবে।
কেউ কেউ এই ভ্রমনকে বলতে চাইবে
সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত।
কেউ বলবে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ।
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বলতে চাইবে কেউ কেউ।
কেউ বলতে চাইবে এটি বিপ্লবের অগ্রবাহিনীর প্রতীক।
সে হাঁটতে থাকবে…
অতপর আমাদের বিতর্ক সংঘর্ষে পরিণত হবে।
এবং সংবাদপত্রের জন্য আমরা বিবৃতি খসড়া
লিখতে শুরু করবো।
আমাদের অস্ত্রধারী কর্মীগন
পরস্পরের দিকে পিস্তল তাক কোরে থাকবে।
বাক্যহীন-
সকলের চোখেমুখে ফুটে উঠবে অত্যাধুনিক ঘৃনা।
সে হাঁটতে থাকবে। সে হাঁটতেই থাকবে…
১০.০১.৯০ মোংলা বন্দর