ধাবমান ট্রেনের গল্প

তখন সন্ধ্যার পর আমাদের সব কথা বলা হয়ে গেছে।
মুখোমুখি বোসে থাকা কথাহীন ক্লান্ত চোখ, নোখ খুঁটে খুঁটে
যে যার স্মৃতির কাছে ফিরে এসে হয়েছি নিরব কোলাহল-
সব কথা বলা হয়ে গেছে।

তখন স্তব্ধতা জুড়ে শুধু মেঘ- শুধু ঘাম- শুধু যন্ত্রের চিৎকার
স্মৃতি আর আকাংখার সব গল্প বলা হয়ে গেছে।
জীবনের কথাগুলো এরকম মুহূর্তে ফুরায়
স্পর্শ করার আগেই ভালোবাসা গৃহ ছেড়ে এভাবে পালায় দূরে।

ধাবমান ট্রেন তার ছুটে চলা ধাতব জীবন,
আমাদের সবুজ কম্পার্টমেন্ট তবু শব্দহীনতা- মৃত্যুর মতো-
যেন ফসল উঠে যাওয়া নিম্ব ক্ষেত- ভেঙ্গেচুরে প’ড়ে আছে
তার মাঝে শীতের বিষন্ন রোদ, নিরুত্তাপ- অসুখে মোড়ানো।

আমাদের সব গল্প, সব কথা, সব স্মৃতি বলা হয়ে গেছে,
টের পেয়ে আকাশের দেহ থেকে ঝ’রে পড়ে সন্ধ্যার তমসা
আমাদের নিশব্দের প’রে, আমাদের জীবনের প’রে।

আমরা কি কোনোদিন আর কোনো কথা বলবো না?
এরকম পরস্পর মুখোমুখি বসে থেকে থেকে
ছুটে চলা সময়ের ট্রেনে কোনোদিন আবার হবো না মুখরিত?
কোন কথা বলবো না!

আমরা কি কিছুই কবো না আর?
আকাশের দেহ থেকে ঝ’রে পড়ে সন্ধ্যার আঁধার-
এসো কথা বোলে উঠি, আমরা ভালোবাসার কথা বলি,
এই নিশব্দের দেয়াল ভেঙে এসো আজ স্বপ্নের কথা বলি।

আমাদের প্রিয় কথাগুলো, গল্পগুলো, প্রিয় স্বপ্নগুলো
সেই শৈশবের মতো কতোদিন প্রান খুলে বলিনি কোথাও!
আহা, কতোদিন আমরা আমাদের ভালোবাসার কথা বলিনি!

২৫.০৯.৭৭ মিঠেখালি, মোংলা।