ফাঁদে অন্ধকারে

কারো জন্যই তো কেউ অপেক্ষা করে না,
যে যার মতোন ব’ইয়ে যায়-

আমার দিবস রাত ছিলো ফাঁদে আর অন্ধকারে
তৃষ্ণায় এবং হাহাকারে শ্রাবণের নদীর মতো
প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ।

বিক্ষোভ নিজের প্রতি, বিক্ষোভ স্বজনের প্রতি
বিক্ষোভ প্রতিবেশ এবং জীবনের প্রতি-

আমি ছিঁড়তে পেড়েছি ফাঁদ।
আজ আমি মাকড়শার জালগুলো
আলতো হাতে সরিয়ে দিতে পারি।
আমি এখন অন্ধকারেও ঠিক চিনতে পারি কোনটি মুদ্রা
আর কারা সব রমনকাঙাল নারী, কারা মৃগনাভি
কারা অরণ্যের কামুক হরিণ-

রোদের মতোন আজ আমিও আঙুল তুলে
চিহ্নিত করতে পারি
কে পনেরো এবং কে পঁচাশি
কারা স্বর্নলতা, কারা পরগাছা তরু- মূলত শোষক…

তা হলে অপেক্ষা কেন?
কার জন্যে বোসে থাকা প্রতীক্ষায়?
কার জন্যে এই মঞ্চ সামনে সাজিয়ে নিয়ে বোসে থাকা?
মঞ্চ মঞ্চ খেলা কতো আর!
আমি তখন তোমার দিকে এগুচ্ছিলাম।
আমি ঝেড়ে ফেলতে চাইছিলাম আমার খাঁচার কষ্ট।
ছিন্নভিন্ন আমার শরীর, অন্ধকারের চাবুকে
থ্যাতলানো স্পর্শকাতরতা,
আমি শুশ্রূষা চাইছিলাম-

তুমি ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার রক্তাক্ত কাতরতার উপর,
তোমার স্নেহার্দ্র নোখ লেগে
তোমার তৃষ্ণার্ত চুম্বনের ঘ্রাণে
আমি জেগে উঠলাম
দেখলাম তোমার কোলজোড়া অন্ধকার,
শাদা সিঁথি, ললাটে লেপ্‌টে যাওয়া ব্যথিত সিঁদুর-

আমি তখন তোমার দিকেই ডিঙোচ্ছিলাম,
আমি ছেটে ফেলছলাম আমার ডালপালা
অপ্রয়োজনীয় শিকড়।
আমি কেবল তোমার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছিলাম-
আর ঠিক তখনি ফাঁদে আটকে ফেল্লে তোমার পা।
একজন তরুণ-স্বাধীনতার জন্যে
যে ফাঁদ রেখেছ পেতে
এই তৃতীয় পৃথিবীর সভ্যতা,
সেই জলপাই ফাঁদে তোমার পা
তোমার চারপাশে মাকড়শার জাল- খাঁচা
খাঁচায় তোমার স্বপ্ন
তুমি আবর্তিত হচ্ছো এক বৃত্তাকার অর্থহীনতায়-

আমি তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি না,
দূরত্বের কাঁচে ঠেকে ফিরে আসছে আঙুল।
আমি তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি না,
মাকড়শার জালের চতুরতা ঘিরে রেখেছে তোমাকে।
আমি তোমাকে স্পর্শ করতে পারছি না,
জলপাই আদালতে পাখিদের নামে হুলিয়া ঝুলছে-
প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করছে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে।।

১৫.০৩.১৯৮৭, মোংলা বন্দর