হে আমার বিষণ্ণ সুন্দর

সারারাত স্বপ্ন দেখি, সারাদিন স্বপ্ন দেখি
যে-রকম আকাশ পৃথিবী দ্যাখে, পৃথিবী আকাশ,
একবার অন্ধকারে, একবার আলোর ছায়ায়
একবার কুয়াশা-কাতর চোখে, একবার গোধুলির ক্লান্ত রোদে-
সারারাত স্বপ্ন দেখি-সারাদিন স্বপ্ন দেখি।

একখানি সুদূরের মুখ জ্ব’লে থাকে চেতনার নীলে,
কে যেন বাদক সেই স্বপ্নের ভেতরে তোলে বিষাদের ধ্বনি
আঁকে সেই প্রিয়মুখে-সুদূরের মুখে
বর্নময় রঙিন বিষাদ।

ফিরে আয় বোলে ডাকি- সে বাদক উদাসিন থামে না তবুও…

সারারাত স্বপ্ন দেখি, সারাদিন স্বপ্ন দেখি-
স্বপ্নের ভেতরে তুমি হে আমার বিষণ্ণ সুন্দর
চোখের সমুখে আজ কেন এসে দাঁড়ালে নিঠুর!
কেন ওই রক্তে-মাংশে, কেন ওই নশ্বর ত্বকের আবরনে
এসে আজ শুধোলে কুশল?

হে আমার বিষণ্ণ সুন্দর
হৃদয়ের কূল ভেঙে কেন আজ এতো জল ছড়ালো শরীরে
কেন আজ বাতাসে বসন্ত দিন ফিরে এলো কুয়াশার শীতে!

কে সেই বংশীবাদক স্বপ্নের শিয়রে বোসে বাজাতেন বাঁশি
বেদনার ধ্বনি তুলে রাত্রি দিন, সে আজ হারালো কোথায়?

বেদনার রঙ দিয়ে আমি যারে আঁকি
হৃদয়ের রক্ত দিয়ে আমি যারে আঁকি
আমার কষ্ট দিয়ে, আমার স্বপ্ন দিয়ে যে আমার নিভৃত নির্মান
সেই তুমি- হে আমার বিষণ্ণ সুন্দর

মর্মমূল ছিঁড়ে এসে ঠাঁই নিলে কেন এই মাংশের বুকে!
কেন ওই বৃক্ষতলে, কেন ওই নদীর নিকটে এসে বোলে গেলে
তোমার ঠিকানা!

আমি তো প্রার্থনাগুলো শস্যের বীজের মতো দিয়েছি ছড়িয়ে
জল তাকে পুষ্টি দেবে, মাটি তাকে ভূমি দেবে, তুমি তার গভীর ফসল-
বাতাসে তুলোর মতো তুমি তবে উড়ে এলে কেন!

কেন আজ পোড়া তুষের গন্ধে শুধু জন্মের কথা মনে পড়ে!
শৈশব কৈশোর এসে মিশে থাকে ফাল্গুনের তুমুল হাওয়ায়
একটি রাত্রি কেন হয়ে ওঠে এতো দীর্ঘ দীর্ঘ রাত?

হে আমার বিষণ্ণ সুন্দর
দুচোখে ভাঙন নিয়ে কেন এই রুক্ষ দুঃসময়ে এলে
কেন সমস্ত আরতির শেষে আজ এলে শুন্য দুখানি হাত!
কেন এলে, বিষণ্ণ সুন্দর, তুমি কেন এলে?

০২.০২.৭৮ সিদ্বেশ্বরী, ঢাকা।