মন-মানসী

এ ফুল যাবে গো ঝরে,
এ মালা যাবে গো ছিঁড়ে।
সাঁঝের এ প্রদীপ যাবে নিভে
তবু তুমি আমারি রবে।
এ পথিক যাবে চলে,
এ পান্থে কুটির ফেলে।
আশার স্বপন অস্তাচলে যাবে,
তবু তুমি আমারি রবে।।

এ চাঁদ রবে না গগনে,
এ ঘ্রান ছড়াবে নাহি পবনে।
বাসর রজনী বিস্মৃতি মাগিয়া লবে,
তবু তুমি আমারি রবে।।

এ চলা মোদের হবে গো শেষ,
রহিব না এ মায়া কুসুম বেশ।
নতুন পুষ্প মাতিবে নতুন সৌরভে,
তবু মানসী তুমি আমারি রবে।।

যেখানে রহিবে ওগো যে ফুলের বনে,
যে মায়া বাঁধিবে আসি যে মধুর ক্ষনে।
কন্ঠে শোভিবে যে হার যে বাসরঘরে,
যে ফুল হাসিবে ওগো কবরী পরে।
আমার সকলি ওগো ভাবিও সেথায়
যে আশা ঝরে গেছে রাতের ছোঁয়ায়
সকলি ভাবিও মোর
যে বেদনা আঁখিলোর
সবি মোর উপহার,
কিছুই ছিল না প্রাপ্য তোমার।
এ তুমি চেয়েছিলে আনন্দমেলায়
অন্তগোধুলি সাঁঝের বেলায়
গন্ধ হানার ঘ্রান,

তুমি চেয়েছিলে সঙ্গীতমাখা প্রান।
আমার সাগরে ভাসিয়া তুমি
হৃদয়ে লয়েছ সব,
তোমার মিলন সুখের বীনায়,
জেগে আছে ব্যথা রব।
আমার ব্যথায় তুমি জেগে রবে
তোমার সুখে বাঁধিয়া লবে
আপন করিয়া মোরে,
তোমার ব্যথার সকল কুসুম
দাও মোর প্রানে ভরে।
সে ফুলের মালা তোমার আমার
বিরহের সুর হয়ে,
চির জনমের বাঁশরীর তালে,
এ জীবনে রবে ছেয়ে।

সকলি নিঃশেষ হোক,
সব ব্যথা প্রানে রোক
সব আশা ঝরে যাক আঁধারে নিরবে,
তবু তুমি আঁখিজলে মোর
চিরদিন জেগে রবে।

১২ বৈশাখ, ১৩৭৯, লালবাগ, ঢাকা।