অবচেতনের পথঘাট

সোনালি জোৎস্না মাথার ভেতরে গড়ে তোলে বিস্তার।
সবুজ ঘোড়ারা ঘুরেফিরে আসে নীল ঘোড়াদের কাছে,
সাথে কতিপয় কাচুমাচু মুখ গোবেচারা খরগোশ,
একে অপরের গায়ের সুবাসে শ্রেফ বুঁদ একাকার।

রাতের দেয়ালে লাল লেখাগুলো মুছে ফেলে যায় কারা!
বুটের ডগায় হাসে স্বদেশের প্রাকৃতিক শ্যামলিমা।
আর দুএকটি দলছুট শাদা দিগন্ত-কবুতর
উড়ে যেতে চেয়ে দ্যাখে পায়ে বাঁধা প্রতারক শৃংখল।

তকমা সাঁটানো জলপাই রঙ গম্ভীর কুম্ভির,
সূর্যের দিকে পা দুখানি তুলে রয়েছে নির্বিকার।
আর চুনোপুটি ত্রুটি ও ভ্রূকুটি এক হাঁড়িতেই রাঁধে।
যারা খায় তারা ধন্য ধন্য, বাকিরা খাকি না, নাকি।

সহসা ঘূর্নি সবুজ ফেনায় গ্রাস করে চারদিক-
উভয়ে খেচর আর উভচর মৈত্রীর পথ খোঁজে।
সূর্য ভাগাড়ে জ্বাল দেয়া যতো তরল রঙের পিপে
দিলো উল্টিয়ে নিখিলের এই নিকটবর্তী তীরে।

ধীরে ধীরে গাঢ় ঘুম নেমে এলো অবচেতনের তলে,
তারপর রঙ, অবিরল রঙে দিগন্ত ভেসে যায়।
একবার ভাবি শিশু হয়ে ধরি রঙের প্রান্তরেখা,
স্মৃতিরা হা হা হা কড়া নেড়ে ওঠে ঠিক সবুজের নিচে।

পিচে ঘর্ষনে চাকায় হাকায় সর্বগ্রাসিনী থাবা,
দেখি সড়কের চৌরাস্তায় ষোড়শীরা আছে ঝুলে
উদ্বন্ধনে, লাল রঙগুলো কোথায় হারালো আজ?
গম্বুজে কালো অচেনা কোকিল গেয়ে ওঠে কোন সুর?

লাটাই গুটাই, ফুটাই পাথরে প্রথাসিদ্ধির ফুল,
আমার এখন ডানা মেলবার মুহূর্ত শেষতম।
অথচ অবাক চুলের শাখায় ধরেছে আমার দেখি,
খুব সকালের আকাশের মতো অম্লান আমলকি।

আমি তো এখন গলিত রাতের সমস্ত কালি মেখে
চিত হয়ে শুয়ে দেখবো দুপাশে রক্তের বেচা কেনা।
কোটি কোটি শাদা পঙ্গপালের শেষহীন অভিযান,
পার হয়ে যায় পৃথিবীর পথ, নদী, দেশ, লোকালয়।

ঝড়ো হাওয়া বয়- কে যে খুলেছিলো কবাট কখন জানি!
ফেরা হয় নাই, দ্রাক্ষার রসে ঢাকা পড়েছিল চোখ।
দিগন্তে দেখি মিশেছে সকল আলোকিত রাজপথ,
হেঁটে চলে যাবো। কে কি বলেছিলো আজ আর মনে নেই।

লাল ফুলগুলো কোথাও দেখি না, রাত জেগে থাকে ঘুম,
ঝড়ো বাতাসে কে রুমাল উড়াবে? ভালোবাসি তাকে, বাসি,
স্মৃতিস্বপ্নের লাল ফুলগুলো তুলে দেবো তার হাতে-
ক্ষমা কোরে দিও, কে যে বলেছিলো! কে যে বলেছিলো! কবে?

১৯.০১.১৩৯৫ রাজাবাজার, ঢাকা