স্বজনের শুভ্র হাড়

বুকের তিমির ঠেলে জেগে উঠেছে যে-দ্বীপ
সে আমার ভালোবাসা,
ব্যথার প্রবাল জমে তিলে তিলে গ’ড়ে ওঠা বাসনার ভূমি।

হননের রক্তপাত শেষে
বিনাশের ধ্বংশযজ্ঞ শেষে
নীলিমার মতো শুভ্র স্নিগ্ধ তনু যে-দ্বীপ উঠেছে জেগে
সে-আমার রক্ত, মাংশ, হাড়, করোটির কষ্ট দিয়ে বোনা
একখানি স্বপ্ন-ধোঁয়া হৃদয়ের তাঁত।

সে-আমার নোতুন বসতভূমি সাগরের চর,
আমার গৃহের সুখ, জীবনের নিশ্চিত প্রহর।

এইখানে আবার সাজাবো নীড় সোনালি সময়,
এইখানে অঘ্রানের চাঁদ সমস্ত বছর দেবে নির্ভার পূর্ণিমা-
বেদনার দীর্ঘ রাত্রি শেষে
বিনাশের রক্তপাত শেষে
আমাদের দ্যাখা হলো,
ব্যথার প্রবাল দ্বীপে পুনরায় দ্যাখা হলো তোমার আমার।
রক্তে ধোয়া মমতার মাটি-
স্বজনের শুভ্র হাড় চারিপাশে ফুটে আছে অপরূপ উজ্জ্বল ফুল,
আমাদের সম্মুখে দিগন্তের মতো প্রসন্ন ভবিষ্যৎ…
ব্যথার প্রবাল দ্বীপে পুনরায় দ্যাখা হলো তোমার আমার।

রক্তের নিবিড় স্রোতে করাঘাত কোরে যায় স্মৃতি,
বুকের বাঁ-পাশে তার অস্ফুট কান্নার মতো ব্যথা এসে বাজে।
স্বজনের রক্তে ধোয়া এই প্রিয় মাটির সিঁথানে
আমাদের ব্যথিত প্রনাম এসো জ্বেলে দিই ধুপের মতোন।

কোনোদিন এই সব মানুষেরা ফিরবে না আর…
যে-রাখাল উদাস দুপুরে তার বাঁশির সুবাস ছড়াতো বাতাসে
সে আর ফিরবে না।
যে-নারী সিঁথায় লাল সিঁদুরের স্নিগ্ধ প্রেমে এঁকেছিলো মুগ্ধ নীড়
সে আর ফিরবে না।
যে-যুবক রাইফেলে ক্ষুব্ধ হাত বারুদের মতো তেজি বিস্ফোরন
বুকে নিয়ে ছুটেছে মাতাল- সে আর ফিরবে না, সে আর ফিরবে না…

স্বজনের শুভ্র হাড় চারিপাশে ফুটে আছে ফুলের মতোন।
বিজয়ের ব্যথিত মিছিল তবু কেন চলে ভুলের ভুবনে
কেন তবু ভুল জীবনের পায়ে রেখে আসে পুষ্পের প্রনাম?

বুকের তিমির ভেঙ্গে সুপ্রভাতে আমাদের দ্যাখা হয়েছিলো,
সুরম্য আলোর নিচে জেগে ওঠা আমাদের স্বপ্ন-ধোয়া দ্বীপ-
তবু সেই নিশ্চিত প্রহর আজো আসেনি এখানে,
তবু সেই অঘনের পূর্নচাঁদ ছড়ায়নি জোস্নার আরক।

আমার ভাষার কন্ঠ রোধ কোরে আছে আজো চতুর শ্বাপদ,
আজো শুধু স্বজনের শুভ্র হাড় চারিপাশে ফুটে আছে
উজ্জ্বল বিষণ্ণ ফুল।

১৩.০২.৭৮ সিদ্বেশ্বরী, ঢাকা।