ঘরে-বাইরে

তােমার ক্লান্ত উরুতে একদিন এসেছিল
কামনার বিশাল ইশারা!
ট্যাঁকেতে টাকা নেই,
রঙিন গণিকার দিন হল শেষ,
আজ জীবনের কুঁজ দেখি তােমার গর্ভে,
সেইদিন লুপ্ত হোক, যেদিন পুরুষ পৃথিবীতে আসে!
সময়ের চূর্ণ পাহাড়ে পিঙ্গল মানুষেরা মরে,
কর্কশ কাকের কণ্ঠে শুনি ধ্বংসের গান,
আর গর্ভের ঘুমন্ত তপােবনে কৃষ্ণবর্ণ পুরুষ
তােমাকে নিরন্তর কাপুরুষ প্রহার করে;
সেইদিন লুপ্ত হােক যেদিন মানুষ পৃথিবীতে আসে।
কোনাে নগরে একদিন যেন ছিল
চারিদিকে মেখলার মতাে শালবনের অন্ধকার,
পাহাড়ের মতাে মেঘবর্ণ প্রাসাদ, স্বয়ম্বরা প্রেম;
আর আজো তাে আছে
কাঁচা ডিম খেয়ে প্রতিদিন দুপুরে ঘুম,
স্ফীতােদর দাম্ভিক স্বামীর পিছনে গর্ভবতী সতী সাবিত্রী,
আর বন্যার মতাে পুত্রকন্যা, অরণ্যে রােদন;
হে ঈশ্বর, এ কী অপরূপ!

অনুর্বর বালুর উপরে
কর্কশ কাকেরা করে ধ্বংসের গান।

কাঁচা ডিম খেয়ে প্রতিদিন দুপুরে ঘুম,
নারীধর্ষণের ইতিহাস
পেস্তাচেরা চোখ মেলে প্রতিদিন পড়া
দৈনিক পত্রিকায়।
আর মধ্যএশিয়ার মরুভূমি, নীল-নির্জন সমুদ্র,
বিপুল পৃথিবী আর নিরবধি কাল!

তবু কিছুদূরে প্রখর রৌদ্রে ঘােরে
মহাযুদ্ধের ভগ্নদূত, আর নীলরক্তবান নীলকর কবন্ধ মৃত্যু আনে।
জানি, রক্তহীন অন্তরে প্রতিদিন বারে বারে আসে
ফুটবল মাঠের চঞ্চলতা, অষ্টপ্রহর কাঁপে
ভদ্রমহিলা দেখার তীব্র ব্যাকুলতা;
আর মাঝে মাঝে উদ্যত যমদূত ক্লান্ত হতাশা আঁকে
দিন-রাত্রির নরকের সিংহদ্বারে।

তবু জানি, কালের গলিত গর্ভ থেকে বিপ্লবের ধাত্রী
যুগে যুগে নতুন জন্ম আনে,
তবু জানি,
জটিল অন্ধকার একদিন জীর্ণ হবে চূর্ণ হবে ভস্ম হবে
আকাশগঙ্গা আবার পৃথিবীতে নামবে
ততদিন ততদিন নারীধর্ষণের ইতিহাস
পেস্তাচেরা চোখ মেলে শেষহীন পড়া
অন্ধকূপে স্তব্ধ ইঁদুরের মতাে,
ততদিন গর্ভের ঘুমন্ত তপােবনে
বণিকের মানদণ্ডের পিঙ্গল প্রহার।