খোলা চিঠি

চঞ্চলকে জবাব
I support Henderson with my vote as the rope
supports a man who is being hanged.
Lenin.

আদাব আরজ
হুজুর ধর্মরাজ
আশা করি শরিফ মেজাজ।
সুন্দর প্রভাত, ডায়মন্ডহারবার থেকে ঝড়ো হাওয়া আসে,
দিনরাত্রি আলোড়িত করে জনতার সফর, আমাদের শহর,
বিমান-ঘাঁটিতে হঠাৎ হাজিরা দেয়;
এখনো পড়ে নি বাজ, চলে কুচকাওয়াজ,
নিরপেক্ষ শূন্যে ঘোরে মজাদার হাওয়াই জাহাজ।
হামলা কি হবে শুরু, মেঘ ডাকে গুরু গুরু,
ঝড়ো হাওয়া সারাদিন, মেঘে মেঘে আকাশ কঠিন।

প্রকৃতির পরিহাস! কালের ছলনা।
দুরন্ত দস্যু চারিধারে, হঠাৎ অতর্কিত প্রহারে
উদ্ধত প্রাসাদ কাঁপে থরে থরো, ছিন্নভিন্ন বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য,
বনেদি বুদ্ধিতে এতদিনে এসেছে সম্পূর্ণ নৈরাজ্য:
বর্মা থেকে জয়রথে
বীর সৈন্যদল ফিরে এল ভারতে।
অবশ্য চরম জয় ওঁদের, এ-সব তো সাময়িক হার;
তবু ভাব একবার, সামরিক বুদ্ধি ক্ষুরধার
মাত্র তিনমাসের প্রস্তুতিতে কী করে নিল মাদাগাস্‌কার।
অবশ্য রাজ্যলোভী দস্যু নয়, পৃথিবী করুক বিচার,
অবসরমতো পড়ে দেখ অতলান্তিক চার্টার।

সাম্রাজ্যবাদের এই নাভিশ্বাস মুহুর্তে
প্রতিবিপ্লবের ঝঞ্ঝাবাহিনী
দেশ-দেশান্তরে নতুন সাম্রাজ্যপ্রয়াসী।
তার প্রতিরোধ এদেশে- আমাদের প্রতিজ্ঞা।
এ-ক্রান্তিতে, এতদিন অহিংস অসহযোগ মজ্জাহীন,
মুষ্টিমেয় বেণে, আর মধ্যবিত্ত, পরজীবী, শেঠির দালাল,
যদি স্ফীত স্বার্থের স্নায়ুতে
মনের অন্ধকারে, বামন বুদ্ধির ভ্রান্তিতে ঘোরে
কূপমকের মতো; যদি ভাবে, মিরজাফরি জিন্দেগি মন্দ কি,
ডাকে কুমির, কাটে খাল, যদি বলে, স্বাধীনতা তৈরি মাল,
এ চিজ এদেশে আনবে দ্রলোক নন্দদুলাল,
কুরুক্ষেত্রে কীবের পন্থা ধর;
যদি চায় হিন্দুস্থান লোলুপ জাপান
তবে জবাব তাদের হাতে, এদেশ যাদের,
যারা লাঙলে তিলে তিলে সোনা ফলায়,
অন্নের প্রাণের কাঙাল,
নয়নাভিরাম নীল মেঘ দেখে যারা ফসলের দিন গোনে,
কারখানায় কলে যারা দধীচির হাড়ে সভ্যতার বুনিয়াদ গড়ে
শহরে শহরে।
দেশে-বিদেশে, বন্যার মুখে জাঙাল বেঁধে
তারা বলে, দুনিয়ার দুশমনের প্রতিরোধে
দুনিয়াকো কিষাণ-মজদুর, মজদুর-কিষাণ এক হো।

আজ ছিন্নভিন্ন প্রাণপলাশ, রক্তকরবী;
অন্ধকার সূর্যের খনি ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
হিটলারি বর্গির নামে ইউরোপের মুখে নামে করাল ঘৃণার ছায়া
এদিকে ওদিকে হঠাৎ আক্রমণে নরঘাতকের শবদেহ জমে;
শীত শেষ, ১৯৪২ সালে মহাযোদ্ধা বসন্ত এল,
এ বসন্ত কাদের? লক্ষ লাল সৈন্য অগ্রসর বলিষ্ঠ জয়গানে,
রক্তলোভী বন্য সৈন্য হত হয় অক্লান্ত অভিযানে,
উদয়ী সূর্যের দেশ প্রাচ্যে ছায়া ফেলে, লড়ে বীর চিনে
নির্মম সঙ্গিনে।
অসংখ্য বর্গির গোরস্থানে
পুঁজিবাদ চূর্ণ হবে সারা দুনিয়ায়, লুপ্ত হবে এ-হিন্দুস্থানে,
হে সরকার, হুজুর সরকার
হুজুর বড়লাট, জঙ্গিলাট, বর্মাবীর আলেকজান্ডার,
আমরা বান্দা এখনো, তবু বন্দী তোমরা নিজেদের জালে
ইতিহাসের জাঁতাকলে, আত্মঘাতী নসিবের ফলে।