আলোর পাথার

কে বাজালে মাঝ্-দিনে আজ প্রহর-রাতের সুর সাহানা!
শঙ্খ-গৌর মেঘের মেলায় শঙ্খ-চিলের মিলায় ডানা;
জর্দ্দা-কাঠির গম্বুজেতে ময়না জেগে স্বপ্ন দেখে,
শিউলি-ফুলি হাওয়ায় ভেসে ঘাসের ফুলে ফড়িং ঠেকে!

গাছের গোড়া গোল্টি ক’রে নিকিয়ে ছায়া দ্যায় নিভৃতে,
সেই চাতালে রাখাল আসে একটুকু গা গড়িয়ে নিতে।
জলের তালে ঢুল্ছে মাঝি বাঁধা নায়ের ছই-তলাতে,
টুনটুনি ধায় এক্লা কেবল করম্চা-ডাল টল্মলাতে।

পালান্-ছোঁয়া শাঁওলা ঘাসে বাছুর গরু চরছে পালে,
নাড়িয়ে দু’কান তাড়িয়ে মাছি লোটন্-ল্যাজের ছেপ্কা-তালে,
দীঘির জলে রূপোর ঝিলিক দেখ্ছে ব’সে মাছরাঙা সে,
ঢল্-নামা জল থিতায় গাঙের,- যায় দ্যাখা তার পাড় ভাঙা যে

পতর-আঁটা গতর নিয়ে চলছে গেতো বোঝাই-ভরা,-
মাঝাই বেলার গোড়েন্ সুরে গোড় দিয়েছে নেইক ত্বরা।
দূর কিনারায় পাঁজর-খোলা মেরামতের নৌকাখানা
প’ড়ে প’ড়ে খেয়াল দ্যাখে বন্যাদিনের প্রলয় হানা!

চরের পরে ঝিমায় কাছিম, চোখের পাতে মোতির দানা,
পিঠেতে তার ঝিমায় ব’সে শামুক-খুলি পাখীর ছানা।
মরালী ধায় লহর তুলে মরাল তাহার ফেরে পাছে,
দোলন-চাঁপার নিথর মোহে মগজটা তার ভ’রে আছে।

মাজা আলোয় সাজন সাজে, বিজন গেহে মুগ্ধ চোখে,-
বাজন বাজে বুকের তালে, আয়নাতে মুখ দেখ্ছে ও কে!
আতর-ভরা চাওনি দিয়ে আপনাকে ও বরণ করে,
চাঁপাই আলো সাত ঝরোকায় ঝাঁপায় রে ওর চরণ পরে।

আলোর আতর থিতিয়ে বুঝি এই অপরূপ রূপ পেয়েছে,
রূপের ধূপের সৌরভে আস্মান ছেয়েছে- প্রাণ ছেয়েছে,
আস্মানে আর পরাণে আজ সোনার পোড়েন্ সোনার টানা,
শুক্তি-ধবল মেঘের মেলায় হংস-মিথুন মিলায় ডানা।