গ্রীষ্ম-মধ্যাহ্নে

মধ্যাহ্ন; গ্রীষ্মের রাজা, মহোচ্চ সে নীলাকাশে বসি’
নিক্ষেপিল রৌপ্যজাল, বিস্তৃত বিশাল পৃথ্বী পরে;
মৌন বিশ্ব; দহে বায়ু তুষানলে নিশ্বসি’ নিশ্বসি’;
জড়ায়ে অনল-শাড়ী বসুন্ধরা মূরছিয়া পড়ে।

ধূ ধূ করে সারাদেশ; প্রান্তরে ছায়ায় নাহি লেশ;
লুপ্তধারা গ্রাম-নদী; বৎস গাভী পানীয় না পায়;
সুদূর কানন-ভূমি (দেখা যায় যার প্রান্তদেশ)
স্পন্দন-বিহীন আজি; অভিভূত প্রভূত তন্দ্রায়।

গোধূমে সর্ষপে মিলি’ ক্ষেত্রে রচে সুবর্ণ সাগর,
সুপ্তিরে করিয়া হেলা বিলসিছে বিস্তারিছে তারা;
নির্ভয়ে করিছে পান তপনের অবিশ্রান্ত কর,
মাতৃ ক্রোড়ে শান্ত শিশু পিয়ে যথা পীযুষের ধারা।

দীর্ঘনিশ্বাসের মত, সন্তাপিত মর্ম্মতল হতে,
মর্ম্মর উঠিছে কভু আপুষ্ট শস্যের শীষে শীষে;
মন্থর, মহিমাময় মহোচ্ছ্বাস জাগিয়া জগতে,
যেন গো মরিয়া যায় ধূলিময় দিগন্তের শেষে।

অদূরে তরুর ছায়ে শুয়ে শুয়ে শুভ্র গাভীগুলি
লোল গল-কম্বলেরে রহি’ রহি’ করিছে লেহন;
আলসে আয়ত আঁখি স্বপনেতে আছে যেন ভুলি’,
আনমনে দেখে যেন অন্তরের অনন্ত স্বপন।

মানব! চলেছ তুমি তপ্ত মাঠে মধ্যাহ্ন সময়ে,
ও তব হৃদয়-পাত্র দুঃখে কিবা সুখে পরিপূর!
পলাও! শূন্য এ বিশ্ব, সূর্য্য শোষে তৃষামত্ত হয়ে,
দেহ যে ধরেছে হেথা দুঃখে সুখে সেই হবে চূর।

কিন্তু, যদি পার তুমি হাসি আর অশ্রু বিরর্জ্জিতে,
চঞ্চল জগত মাঝে যদি থাকে বিস্মৃতির সাধ,
অভিশাপে বরলাভে তুল্য জান,- ক্ষমায় শান্তিতে,
আস্বাদিতে চাহ যদি মহান্ সে বিষন্ন আহ্লাদ,-

এস! সূর্য্য ডাকে তোমা, শুনাবে সে কাহিনী নূতন;
আপন দুর্জ্জয় তেজে নিঃশেষে তোমারে পান ক’রে,-
শেষে ক্লিন্ন জনপদে লঘু করে করিবে বর্ষণ,
মর্ম্ম তব সিক্ত করি’ সপ্তবার নির্ব্বাণ-সাগরে।

লেকঁৎ-দে-লিল্।