জন্মাষ্টমী

বিশ্বে আজি ওতঃপ্রোত তড়িতের সঘন স্পন্দন,
বিদ্যুতের দৌত্য চলে মিলাইতে ছিন্ন ভিন্ন মেঘে;
অন্ধ-করা অন্ধকারে বন্ধ দৃষ্টি, যামিনী গহন,
বন্দীর মন্দিরে হায় ক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা আছাড়িছে বেগে।

লুপ্ত যত গতিপথ ভরা বরষার অশ্রুধারে,
জাগে উপবাসী চিত্ত বিশ্বাসের বিত্ত বুকে করি’-
গতিহীন মুক্তিহীন ব্যথিত শৃঙ্খলের ভারে,-
আনন্দের নাহি লেশ, জাগি’ তবু যাপিছে শর্ব্বরী।

এলে কি এলে কি ওগগা গুপ্তচারী শিশু যাদুকর?
মধু-দৈত্য অধিকারে মোহ-ঘেরা মথুরা নগরে?
প্রাচীরের হের-ফের,- লোহার কবাট ভয়ঙ্কর,-
তা সবে ভেঙে কি এলে অপথের মাঝে পথ ক’রে?

এলে কি আনন্দরূপ! পুলকিয়া সুপ্ত নীপবন,-
ফণীফণা-ছত্রশিরে শান্ত শিশু আনন্দে-নির্ভয়!
রাখালেরে কোল দিতে আচারীর নাশিতে পারণ
এস তুমি দর্পহারী! এস প্রেমী! এস সৰ্ব্বজয়।

এস আলো-করা কালো! এস ফিরে কালিন্দীর কূলে,
বাজাও মুরলী তব,- যমুনা উজান যাহে বয়,-
এস রাস-নৃত্যে ফিরে দোলে দুলে ঝুলনায় স্কুলে
এস তুমি হে কিশোর! রিক্ত শাখে এস কিশলয়!

এস ইন্দ্র-অর্ঘ্য-হারী! নব বেদ কর উচ্চারণ!
নিয়ম-দারুণ দেশে হোক ফিরে তারুণ্যের জয়;
ভয়-পাণ্ডু পাণ্ডবের এস বন্ধু! এস জনার্দ্দন!
এস পাঞ্চজন্যধারী কংসের বংশের চিরভয়।

বর্ষে বর্ষে যুগে যুগে জাগে দেশ তব প্রতীক্ষায়,
তব জন্মতিথি-দিনে কীৰ্ত্তনি তোমার কীর্তিকথা;
এলে কি বিচিত্র-কৰ্ম্মা! পুনরায় এলে কি ধরায়?
জরাভরা ভারতের চিত্তবাসী চির-তরুণতা!