লাল পরী

লাল পরী গো! লাল পরী!
ইন্দ্র-সভার সুন্দরী!
কখন্ আসিস্ কখন্ যাস্!
কার গালে যে গাল বোলাস্
কার ঠোঁটে যে ঠোঁট থুলি!
কার হাতে পায় তুল্তুলি-
ফোটাস্ রাঙা পদ্ম গো
জান্বে তা কোন্ মদ্দ গো।

তোর চুমাতে হয় যে লাল
খোকা খুকীর হাত পা গাল,
আঙুলগুলি কুঙ্কুমের
কিশোর কেশর তুল্য হয়,
দেয়ালা তুই তার ঘুমের
তাই ঘুমে প্রফুল্ল রয়;
লাল পরী গো! লাল পরী!
স্বপ্ন-পুরীর অপ্সরী!

ইন্দ্রলোকের রীত এ কি!
লুকিয়ে যেতে আস্তে হয়!
দেবতা হ’য়েও তোর,-দেখি,
লুকিয়ে ভালো বাস্তে হয়!

সবুজ পরী এক-ঝোঁকা
নয় সে মোটে তোর মতন,
তাই তো মানা আজ ঢোকা
ইন্দ্রপুরে তার এখন;
সবুজ পরী এক ঝোঁকে
মানুষ রাজার পুত্রকে
বাস্ল ভালো কায়মনে
মিলতে এল তার সনে;
এই অপরাধ- এই তো পাপ,
অম্নি হ’ল দৈব শাপ,-
থাকতে হবে মর্ত্তে গো।
মৃত্যু-কীটের গর্ত্তে গো।

সবুজ পরী টল্ল না
শাপের ভয়ে ভুল্ল না,
ভালো বেসেই ধন্য সে
চায় না কিছু অন্য সে;
যেখানে তার চিত্ত রে,
থাকবে সেথাই নিত্য সে;
চায় না যেতে স্বর্গে আর
মানুষ যে প্রেম-পাত্র তার।
করবে তারি দাস্য গো-
যে তার আজ উপাস্য গো!
তাই মরতের পথখানি
সবুজ ক’রে রইল সে,
মর্তে হ’ল চাকরাণী,
প্রেমে সবই সইল রে।

তুমি তা নও লাল পরী!
লুকিয়ে এস লুকিয়ে যাও,
স্বপ্ন-সোঁতায় সঞ্চরি’
খুকীর গায়ে গাল বুলাও!
আবীর বিনা অশোক ফুল
তোমার বরে হয় অতুল,
খোকা খুকীর হাত পা ঠোঁট
হয় সে শিউলী ফুলের বোঁট;
নাই অজানা কিচ্ছু মোর।
চুমু গোলাপ-পাপড়ি তোর,
সাঁঝের মেঘে মুখ মোছো
উষার আলোয় কুল্কুচো;
লুকিয়ে ফের সুন্দরী
দেখতে কেউ যাও সরি।
লাল পরী গো! লাল পরী
কিশোর-লোকের অপ্সরী!

কিশোর কিশলয় পরে
তোমার পরশ সঞ্চরে,
তোমার চুমায় লাল গুলাল
লাল দুলালী লাল দুলাল,
ছোয় গোপনে তোমার হাত
সিঁদুর কৌটা আতা-পাত।
ফিরছ তরুণ ফুর্তিতে
ডালিম-ফুলি কুর্ত্তিতে!

নব বধূর আয়নাতে
কচি ছেলের বায়নাতে
পড়ছ ধরা পড়ছ গো
রাঙা ঘোড়ায় চড়ছ গো,
ফিরছ মুহু সঞ্চুরি’
লাল পরী গো! লাল পরী!