মনীষী-মঙ্গল

(বিজ্ঞানাচাৰ্য ডাক্তার শ্রীযুক্ত জগদীশচন্দ্র বসু মহাশয়ের সংবর্ধনা উপলক্ষে রচিত)

জ্ঞানের মণি প্রদীপ নিয়ে ফিরিছ কে গো দুর্গমে
হেরিছ এক প্রাণের লীলা জন্তু-জড়-জঙ্গমে।
অন্ধকারে নিত্য নব পন্থা কর আবিষ্কার,
সত্য-পথ-যাত্রী ওগো তোমায় করি নমস্কার।

দাস্ত-কালি যাহার ভালে জন্ম তব সেই দেশে
বিশ্বেরও নমস্য আজি প্ৰতিভা-বিভ-উন্মেষে;
গরুড় তুমি গগনারূঢ় বিনতা-নীড়-সস্তুত,
দেবতা সম ললাটে তব ঋরে কী আঁখি অদ্ভুত!

দরদী তুমি দরদ দিয়ে বুঝেছ তৃণলতার প্রাণ,
খনির লোহা প্রাণীর লোহ পরশে তব স্পন্দমান,
কুহকী তুমি, মায়াবী তুমি, একি গো তব ইন্দ্রজাল
হুকুমে তব নৃত্য করে বনের তরু বন্-চাঁড়াল!
মরমী তুমি চরম-খোঁজা মরম শুধু খুঁজেছ গো,
লজ্জাবতী লতার কি যে সরম তাহা বুঝেছ গো;
অজানা রাজপুত্র সম জড়ের দেশে এক্লাটি
পশিয়া নৃপ-বালার ভালে ছোঁয়ালে একি হেমকাঠি।

হিম যা’ ছিল তপ্ত হ’ল মেলিল আঁখি মূর্চ্ছিত
নূতন পরিচয়ের নব চন্দনেতে চর্চ্চিত!
বনের পরী তুলিল হাই জাগিল হাওয়া নিশ্বাসে,
জড়ের বলে মনের কথা তোমার প্রতি বিশ্বাসে।

দ্বন্দ্ব যত জনম-শোধ চুকিয়া গেল অকস্মাৎ!
চক্ষে হেরে নিখিল লোক জীবনে জড়ে নাই তফাৎ!
ভুবন ভরি’ বিরাজ করে অনন্ত অখণ্ড প্রাণ-
প্রাণেরি অচিন্ত্য লীলা জন্তু জড়ে স্পন্দমান!

জ্ঞানের মহাসিন্ধু তুমি মিলালে যত নদনদী,
বজ্ৰমণি ছিদ্র করে প্রতিভা তব, তীক্ষ্ণধী!
আনন্দেরি স্বর্গে তুমি জ্ঞানের সিঁড়ি নিত্য হে!
সত্য-মহাসমুদ্রেতে সঙ্গমেরি তীৰ্থ হে!

অণুর চেয়ে ক্ষুদ্র যিনি জনক মহাসমুদ্রের
করিলে জ্ঞানগম্য তারে কি বিপ্রের কি শূন্ত্রের;
দ্বন্দ্বহারা আনন্দের করিলে পথ পরিষ্কার
সত্য-পথ-যাত্রী ওগগা তোমায় করি নমস্কার।