নির্জলা একাদশী

সুজলা এই বাংলাতে, হায়, কে করেছে সৃষ্টি রে-
নির্জলা ওই একাদশী- কোন্ দানবের দৃষ্টি রে!
শুকিয়ে গেল, শুকিয়ে গেল, জ্বলে গেল বাংলা দেশ,
মায়ের জাতির নিশ্বাসে হয় সকল শুভ ভস্মশেষ।

* * * *

হাজার হাজার শুষ্ক কণ্ঠে একটি ফোঁটা জল দিতে-
কেউ কি গো নেই কোটির মধ্যে দুর্ব্বলেরে বল দিতে?
কেউ দেবে না জল পিপাসার! কেউ করেনি স্তন্যপান!
কেবল এম্-এ, কেবল বি-এ, কেবল অহংমন্যমান।
কেবল তর্ক, শুষ্ক তর্ক, কেবল পণ্ড পণ্ডিতী,
হৃদয় নেইক, জীবন নেই, নেই স্নেহ, নেই প্রীতি।
দেখ্ছে হয়ত নিজের ঘরেই- দেখ্ছে এবং বুঝ্ছে সব,
দেখ্ছে মায়ের বোনের উপর নির্জলা এই উপদ্রব;
হয় তো রুগ্ন শরীর ভগ্ন হয় তোত মুহু মূৰ্ছা যায়,
তবুও মুখে জল দেবে না!… ধর্ম্ম যাবে! হায় রে হায়!
জল দেবে না, ওষুধ মানা, একাদশীর উপোষ যে,
মরা জরার বুকে বসে ভণ্ডগুলো চোখ বোজে;
হিন্দুয়ানীর বড়াই করে বি-এ, এম্-এ গাল বাজায়,
লম্বা-টিকি- মড়ার মাথায় জোনাক-পোকার দীপ সাজায়।

* * * *

কচি মেয়ের একাদশী- জল চেয়েছে মার কাছে,
বাপ এসে তা কৰ্বে আটক,- ধৰ্ম্ম খসে যায় পাছে;
এও মানুষে ধৰ্ম্ম ভাবে! হায় রে দেশের অধৰ্ম্ম!
হায় মূঢ়তা! এর তুলনায় হত্যাও নয় কুকর্ম্ম।
হত্যা- সে লোক ঝোঁকেই করে এক নিমেষে সকল শেষ;
এ যে কেবল দগ্ধে মারা যাপ্য করা মৃত্যু-ক্লেশ;
বিনা পাপে শাস্তি এ যে, ধৰ্ম্ম এ নয়, হয়রানী,
এর স্বপক্ষে শাস্ত্র নেইক, থাকতে পারে শয়তানী।

* * * *

ধৰ্ম্ম নাকি নষ্ট হবে! বাংলা দেশের বাইরে, হায়,
হিন্দু কি আর নেই ভারতে?… কাঞ্চী, কাশী, অযোধ্যায়?
তারা কি কেউ পালন করে একাদশীর নির্জলা?
ভ্রষ্ট সবাই?… বঙ্গে শুধুই হিঁদুয়ানী নিশ্চলা?

* * * *

স্মাৰ্ত্ত রঘু! স্মাৰ্ত্ত রঘু! শুনছ নাকি আর্ত্তরব?
দেখছ নাকি বাংলা জুড়ে বাড়ছে তোমার অগৌরব?
অগৌরবে ডুব্ছ তুমি- ডোবাচ্ছ এই দেশটাকে,
যারা তোমায় চল্ছে মেনে, টান্ছ তাদের ওই পাঁকে।
তোমার পাপের ভাগী হ’তে ডাক্ছ জরদগব সবে,
একাদশীর এক্লা দোষী- বাড়াচ্ছ দল রৌরবে।
শাস্ত্র গড়ার শক্তি নিয়ে হয়নি তোমার জন্ম, হায়,
পরের উঞ্ছে পেট ভরেছ পরের অন্নে পুষ্ট কায়,
তোমার উঞ্ছ-সংহিতাতে নিজের মৌলিকত্ব কই?
মাথায় তোমার পড়ছে ভেঙে উনিশ মুনির মন্যু ওই!
কার ঘাড়ে কার জুড়লে মাথা ঠিক-ঠিকানা নেই কিছু,
নির্জলা এই দুঃখ বিধান গড়্ল তোমার মন নীচু।
মণির খনি খুড়ে তুমি কেবলি কাঁচ কুড়িয়েছ,
হায় রে শুষ্ক! হৃদয়বিহীন! কেবল ধূলো উড়িয়েছ।

* * * *

পাতি দিয়ে অনেক নরক করলে তুমি ব্যবস্থা,
ভাব্ছি আমি পরলোকে তোমার কেমন অবস্থা?
কোন্ পাকে হায় পুঁতছে তোমায় তৃষ্ণার্তদের তীব্র শাপ?
কোন্ নরকে ডুবছ তুমি পুণ্যবেশী মূৰ্ত্তপাপ?

* * * *

তর্পণে যে দিচ্ছে গো জল দিচ্ছে তোমার উদ্দেশে,
তৃষার্ত্তদের নিঃশ্বাসে তা’ হয় যে ধোঁয়া নিঃশেষে!
ভিজিয়ে দেবে কে আজ তোমার জিহ্বা, তালু আর গলা,
কোন্ সহৃদয় উঠিয়ে দেবে একাদশী নির্জলা?

* * * *

কে নেবে এই পুণ্য ব্রত? কে হবে মার পুত্র গো?
একাদশীর তেপান্তরে খুলবে কে জল্সত্র গো?
কে নেবে মন্দারের মালা মাতৃজাতির আশীর্ব্বাদ?
আশায় আছি দাড়িয়ে যে তার কর্তে বিজয়-শঙ্খনাদ।