নবজীবনের গান

বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিল রে ভাই
ভারতে উদয় হয় নেশনের-
এসেছে সময় দেরী তো নাই।

যমুনার কালো জলের সঙ্গে
কবে কোলাকুলি গঙ্গাজল,
যুবন্ প্রাণের গান শোনা যায়,
উড়ায়ে নিশান চল্ রে চল্।
আত্মপূজার আত্মম্ভরী
রাক্ষসীটারে বাঁধিয়া রাখ্,
গাই-গোত্রের গ্রাম্য স্বার্থ
যুক্তবেণীর জলে মিলাক্।
ছত্রিশ জাতে ছত্রিশ ভাগে
হ’য়ে আছে জরা-সন্ধ দেশ,
পরায়ে বজ্র-কঙ্কণ তারে
ঐক্যে বাঁধিয়া ঘুচা রে ক্লেশ।
চির-যুবা প্রাণ করে আহ্বান,
ভগবান্ আজি সহায় তোর,
ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে গোঁয়াস্নে আর
বাহুতে মিলা রে বাহুর ডোর।
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই
ভারতে উদয় হয় মহাজাতি,
এসেছে সময় দেরী তো নাই।

নেশন হবার এসেছে সময়
নিশিদিন মনে রেখ সে কথা,
বুদ্ধ, নিমাই, নানক, কবীর
তোরি কাছে মাগে সার্থকতা।
মিলনের সাম তারা অবিরাম
গাহিল যে সে কি মিথ্যা হবে,-
চিত্ত-কৃপণ মরণ-পন্থী
ভেদ-অসুরের বিকৃত রবে?
এক অখণ্ড জাতি হব মোরা
হীরা-চুনী-নীলা মিলাব হারে,
ঠাই ক’রে নিতে হবে যে নবীন
জগতের মহা সন্তাগারে!
হের রাক্ষস-সত্রের শেষে
করে প্রতীচ্য শান্তিপাঠ,
স্ব-প্রতিষ্ঠ হবে সব লোক,
গণ্ডী সে ভাঙে, খোলে কবাট।
পৃথিবীর যত শূদ্র জেগেছে,
জেগেছে পরিশ্রমীর দল,
এখন শূদ্র তারাই যাদের
অতীতের লাগি শোক কেবল
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে মহতো মহীয়ান্ হের
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

আশার আলোর আভাস আকাশে
লেগেছে রে, আঁখি মেলিয়া দ্যাখ,
খণ্ড স্বার্থ আহুতি দে ভাই,
চরু নিবি যদি হ’ তোরা এক।
দেবহিতে দেহ দিয়েছে দধীচি;-
দেশ-হিতে আজ তাঁহারি মত
দিতে হবে বলি ভেদবুদ্ধি ও
মর্য্যাদা-লোভ মজ্জাগত।
নেশন গড়িতে অভিজাত জাপ্
সব দাবী ছেড়ে নোয়াল মাথা,
দাইমিয়ে-সামুরাই যা পেরেছে-
ক্ষত্র-বিপ্র! পারিবে না তা’?
ঋষির বশে বলে দিশি দিশি
মানের কান্না কাঁদিবে কে রে?
সূর্যবংশ ব’লে কি আমরা
কর দিই আজো রাজপুতেরে?
শত্রু-শাতন সূক্তে তোমার
শত্রু-নিপাত হয় না আর,
প্রণতি পাবার কেন লোলুপতা?
শেষ ক’রে দাও এ দীনতার
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে উদয় মহাসঙ্ঘের
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

ক্ষত্রিয় হ’ল প্রখ্যাত আজ
ক্ষত্ৰ-ত্রাণের অক্ষমতায়,
ষড়্ভাগ আর দক্ষিণা দাবী
মানিবে কি কেহ মুখের কথায়?
বৃহতী বসুধা,- কে মিটাবে ক্ষুধা,-
বৃহৎ প্রাণের দীক্ষা নেবে?
জনসাধারণে করাবে ধারণ
মহীয়ান্ ব্ৰহ্মণ্য-দেবে!
জন-সাধারণ করুক গ্রহণ
যুগ-সঞ্চিত জ্ঞানের চাবী,
বল হাসিমুখে, ‘দিলাম- দিলাম-
দিলাম- না রেখে কিছুরই দাবী।’
এক বিরাটের অঙ্গ সবাই,
বিকারে রক্ত চড়েছে শিরে;-
মাথার রক্ত মাথা হ’তে নেমে
ঘুরিয়া ফিরুক, সব শরীরে।
স্বাস্থ্য ফিরুক, শক্তি ফিরুক,
কান্তি ফিরুক, বাঁচুক প্রাণ,
হৃদয়ের কল চলুক সহজে,
দূরে যাক গ্লানি কালিমা ম্লান!
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে নেশান-নিশান উদয়-
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

ভেদের চিহ্ন কর হে ছিন্ন,
কুণ্ঠা ঘুচাও, জাগাও স্ফুর্ত্তি,
ভারত ব্যাপিয়া হউক উদয়
এক অখণ্ড সঙ্ঘ-মূর্ত্তি।
প্রেমের সূত্র হোক আমাদের
ঐক্যের রাখী- রাখী আদিম,-
প্রতি পার্শীর সদ্রা যেমন,
প্রতি ইহুদীর তিফিল্লিম্।
বৃহৎ হবার জ্ঞানেরে জাগাও-
ব্রহ্মের জ্ঞান সবারি হোক,
যে প্রণবে প্রাণে নবীনতা দানে
সে প্রণবে দেশ হোক অশোক
হোক জগতের বৃহৎ ক্ষেত্রে
দ্বিতীয় জন্ম আমা-সবার,
হোক দ্বিজ আজ নিখিল-হিন্দু,
দাও খুলে দাও সকল দ্বার।
সংস্কারের সঙ্কোচে ভরা
দীন আত্মারে দাও অভয়,
সকল দৈন্য করিয়া বিনাশ
মহাজাতি-রূপে হও উদয়।
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে মহতো মহীয়ান্ হের
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই
ভারতে উদয় বিশ্বরূপের-
এসেছে সময় দেরী তো নাই।

এসেছে সুদিন, ওঠ, ওরে দীন!
তোরে প্রসন্ন আজি বিধাতা,
হের নেশনের প্রসব-ব্যথায়
আতুরা বিধুরা ভারত-মাতা।
গণকের দল বলিছে কেবল
এখন প্রসব বন্ধ থাক্,
দেরী নাকি ঢের শুভ লগনের,-
পেচকের বুলি চুলাতে যাক্।
ভাবী নেশনের নিশান উড়া রে,
পেয়েছি নিশানা দ্যাখ রে ভাই,
জাতে জাতে হাতে হাতে মিলাইতে
বাড়িয়েছে হাত হের সবাই!
কে আছিস্ জড়ভরতের মত
মিছে আচারের মুখেতে চেয়ে,
শক্তি সাধনে সমান আসনে
তুলে নিতে হয় হাড়ীরও মেয়ে।
নেশনের শিব প্রাণে জাগে যার
শৈব-বিধানে হবে সে বর,
গোস্বামী-মত খুলিবে দরজা
মনু যদি আজ করেনই পর।
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে উদয় মহা মহিমার-
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

তোদেরি ঘিরিয়া খণ্ড ভারতে
মহান্ জাতির হইবে সৃষ্টি,
গ্রীকরাণী সহ চন্দ্রগুপ্ত
করিবে মাথায় পুষ্পবৃষ্টি,
আশিসিবে তোরে কণাদ কবষ
মহীদাস-মাতা পুণ্যবতী,
কল্যাণ তোর করিবে কামনা
তপতী এবং সত্যবতী।
বিশ্বামিত্র করিবে অশিস
ল’য়ে বশিষ্ঠ-সু তারে বামে-
বংশ যাঁহার কনোজে বিদিত
পূজিত আর্য-মিশ্র নামে।
বিষ্ণু ও রমা, রুদ্র ও উমা,
সূর্য্য-ছায়ার অমোঘ বরে
সার্থক হবে নব-ভারতের
এ মহা-মিলন অবনী পরে।
বহিবে যুক্তবেণী ঘরে ঘরে
ঘুচায়ে বর্ণ-ভেদের গ্লানি,
ঘরে ঘরে, ভাই, কানাই বলাই,
হবে যশোমতী ভারত-রাণী
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে এবার মহা মিলনের
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

হ’তে হ’তে যাহা স্থগিত রয়েছে,
পূর সে হবেই, কে দিবে বাধা?-
ঐরাবতের বৈরী হ’লেও
গঙ্গার কাজ হয় সমাধা।
জহ্নুজঠরে জাহ্নবী আর
নয় বেশীদিন জানি গো জানি,
হবে না ব্যর্থ তীর্থঙ্কর-
বোধিসত্ত্বের বিবেক-বাণী।
ইরাণী, তুরাণী, মিশরী আসুরী,
শক, হুন, কোল, হাবসী, সিদি,
রস্কো-দ্রাবিড় মগ-মোগলের
রক্ত মিলল ভারতে বিধি।
আৰ্য-দস্যু ময়-কাম্বোজী
মালাই মিলেছে ভারত-দেহে,
ভাব হ’য়ে গেছে; নিশাসে নিশাস
মিলেছে মিশেছে সখ্যে স্নেহে।
বিয়ে হ’য়ে গেছে; এখন চলেছে
বাসী বিয়েটার রাত কাটানো,
নাই দেরী আর ফুলশয্যার,-
সুরু ক’রে দে রে ফুল-খাটানো।
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে উদয় মহামানবের-
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

মিলন ঘটেছে কত জাতে জাতে,
কত শ্রেণী সাথে মিশেছে শ্রেণী,
তাই ত সাগর-সঙ্গম আর
তীর্থ মোদের যুক্তবেণী।
হ’য়ে গেছে বিয়ে, দ্যাখ না তাকিয়ে
হর-হৃদে তাই কালী বিরাজে,
শ্যাম জলধরে তাই ত দামিনী
রাই শোভে সারা ভারত মাঝে!
হ’য়ে গেছে বিয়ে; নাই সঙ্কোচ
সত্যে স্বীকার করিতে কভু,
মহা-মিলনের রাখী হাতে হাতে
বাঁধেন নীরবে জগৎ-প্রভু।
বাহান্ন পীট এক হবে যাহে
উচ্চারো সেই মন্ত্র তবে,
আনো শক্তির কঙ্কালগুলি-
মহাশক্তির উদয় হবে;
ছোট ছোট সব দেউল টুটিয়া
মিলুক দেবীর শক্তিরাশি,
ভারতে আবার জাগুক উদার
উদাসী শিবের প্রসাদ-হাসি।
হিমালয় হতে মলয়ালয়ম্
তাহারি আভাসে পুলকাকুল,
প্রলয়-পয়োধি-জলে তাই ফিরে
ফুটে ওঠে হের পদ্মফুল।
মহাজীবনের বার্ত্তা এসেছে
মহামিলনের লয়ে নিশান,
ডাকে ভবিষ্য, ডাকিছে বিশ্ব,
করিছে ইসারা বর্ত্তমান।
বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে উদয় হয় বিরাটের-
এসেছে লগন দেরী তো নাই।

[“বাজা রে শঙ্খ, সাজা দীপমালা,
হাতে হাতে আজি মিলা রে ভাই।
ভারতে ………
এসেছে লগন দেরী তো নাই।”

এই চার চরণ কোরাস উচ্চারণ করবে।]