পিতৃপীঠ

ওগো কোথা সেই দেশ, কেমন সে দেশ
কে মোরে বলিবে তাহা?
মোর পরাণের চেয়ে প্রিয় সে, তবুও
চক্ষে দেখিনি, আহা!
তবু সে আমার দেশ, আমারি স্বদেশ,
না জানি দেখিব কবে!
কবে মন্দার-হরিচন্দন-বীথি
নয়নে উদয় হ’বে।
হেথা যত অনশন-ক্লিষ্ট বামন
মিলিয়াছে একঠাই,
হায় ক্ষুদ্রতা আর ক্ষুধা তৃষ্ণার
অবসান হেথা নাই।
হেথা মৃত্যু ফিরিছে দুয়ারে দুয়ারে,-
রাজা প্রজা কাঁপে ত্রাসে;
ওগো নৃত্য-শালায় নূপুরের ধ্বনি
বারে বারে থেমে আসে!
হেথা রাণী কেবা? হায়! দাসী কে হেথায়?
মরণ-অধীন সব!
হায় ধূলি শয্যায় এক হ’য়ে যায়
হাসি-রোদনের রব!
হায় অতুলন রূপ হয় অগোচর,
কুরূপের (ও) মুখ ঢাকে,
ওগো জলের লেখার মতন লুকায়
চিহ্ণ কিছু না থাকে!

যায় আলোক হইতে পুলক হইতে
মলিন ধূলির তলে,
এই উষ্ণ শোণিত হিম হ’য়ে যায়
ধমনীতে নাহি চলে!
হায় এমনি করিয়া লুকায় যেন সে
ছিল না মর্ত্য-লোকে;
ওগো সবার দৃষ্টি এড়ায় মানুষ,-
ভগবান ব্যতিরেকে।
সেই শ্রীপদে যে চির-জীবন-নিঝর,
এতো শুধু ফুৎকার,-
শুধু ক্ষণিকের মায়া,- মরণের ছায়া,-
স্বপনের সঞ্চার।
ওগো, নিখিল শরণ, শঙ্কা হরণ।
সেই শ্রীচরণ চুমি’
আছে ছায়ার মায়ার মরণের পারে
আমার জন্মভূমি।

ক্রিষ্টিনা রসেটি।