সবুজ পরী

সবুজ পরী! সবুজ পরী! সবুজ পাখা দুলিয়ে যাও,
এই ধরণীর ধূসর পটে সবুজ তুলি বুলিয়ে দাও।
তরুণ-করা সবুজ সুরে
সুর বাঁধ গো ফিরে ঘুরে,
পাগল আঁখির পরে তোমার যুগল আঁখি ঢুলিয়ে চাও।

ঘাসের শীষে সবুজ ক’রে শিস দিয়েছ, সুন্দরী!
তাই উথলে হরিৎ সোহাগ কুঞ্জবনের বুক ভরি’!
যৌবনেরে যৌবরাজ্য
দেওয়া তোমার নিত্য কাৰ্য্য,
পাঞ্জা তোমার শ্যামল পত্ৰ নিশান তৃণ মঞ্জরী।

যাদুকরের পান্না জ্বলে তোমার হাতের আংটিতে,
হিয়ার হাসির কান্না জাগে সবুজ সুরের গানটিতে।
কুণ্ঠাহারা তোমার হাসি,-
ভয় ভাবনা যায় যে ভাসি’;
যায় ভেসে যায় পাংশু মরণ পাতাল-মুখো গাংটিতে।

এই ধরণীর অস্থি বুঝি সবুজ সুরের অস্থায়ী
ফিরে ঘুরে সবুজ সুরে তাইতো পরাণ লয় নাহি’;
রবির আলোর গৈরিকেতে
সবুজ সুধা অধর পেতে
তাই তো পিয়ে তরুর তরুণ- তাই সে সবুজ সোমপায়ী।

সবুজ হয়ে উঠল যারা কোথাও তাদের আওতা নেই,
চারদিকেতেই হাওয়ার খেলা আলোর মেলা চারদিকেই;
স্ব-তন্ত্র সে বহুর মধ্যে
পান করে সে কিরণ মদ্যে;
তরুণ বলেই দ্যায় সে ছায়া গহন ছায়া দ্যায় গো সেই।

সবুজ পরী! সবুজ পরী! তোমার হাতের হেম ঝারি
সঞ্চারিছে শিরায় শিরায় সবুজ সুরের সঞ্চারী!
সবুজ পাখীর বাবুই-ঝাঁকে-
দেখতে আমি পাই তোমাকে-
ছাতিম-পাতার ছাতার তলে- আঁখির পাতা বিস্ফারি’।

সব্জে তোমার দোব্জাখানি- আলো-ছায়ার সঙ্গমে
জলে স্থলে বিশ্বতলে লুটায় বিভোল বিভ্রমে!
সবুজ শোভার সারেগামা
ছয় ঋতুতে না পায় থামা,-
শরতে সে ষড়্জে জাগে, বসন্তে সুর পঞ্চমে।

সবুজ পরী! সবুজ পরী! নিখিল জীবন তোমার বশ,
আলোর তুমি বুক-চেরা ধন অন্ধকারের রভস-রস।
রামধনুকের রং নিঙাড়ি
রাঙাও ধরার মলিন শাড়ী;
মরুভূমির সব্জি-বাড়ী নিত্য গাহে তোমার যশ।

সবুজ পরী! সবুজ পরী! নূতন সুরের উদ্গাতা,
গাঁথ তুমি জীবন-বীণায় যৌবনেরি জয় গাথা,
ভরা দীনের তীব্র দাহে-
অরণ্যানী যে গান গাহে-
যে গানে হয় সবুজ বনে শ্যামল মেঘের জাল পাতা।