তাতারসির গান (গান)

(বাউলের সুরে)

রসের ভিয়ান্ চড়িয়েছে রে নতুন বা’নেতে;
তাতারসির মাতানো বাস উঠেছে মেতে।
মাটির খুরি, পাথর-বাটি
কি নার্কেলের আধ্-মালাটি,
বাঁশের চুঙি পাতার ঠুঙি আন্রে ধর্ পেতে!
রসের ভিয়ান্ আজকে সুরু নতুন বা’নেতে।

জিরেন্ কাটে যে রসখানি জিরিয়ে কেটেছে,
টাকা রসের সঙ্গে সে ভাই কেমন খেটেছে;
শুক্ননা পাতার জ্বাল জ্বলেছে,
কাঁচা সোনার রঙ ফলেছে,
বোল্ বলেছে ফুটন্ত রস গন্ধ বেঁটেছে।
জিরেন্ কাটে রসের ধারা জিরিয়ে কেটেছে।

রসের খোলা খাপ্রা-রাঙা ভাপ্রা লাগে গায়,
কেউ কি তবু সরবে?- বরং এগিয়ে যেতেই চায়।
নড়বে না কেউ জায়গা ছেড়ে,
রসের ফেনা উঠছে বেড়ে,
লম্বা তাড়ুর তাড়ার চোটে উপ্চে ফেটে যায়,
রসের ধোঁয়ায় ঘাম দিয়েছে লম্বা তাড়ুর গায়

মিঠার মিঠা! তাতারসি! তুমি কি মিষ্টি!
বিধাতার এই সৃষ্টি-মাঝে বাঙালীর সৃষ্টি
প্রথম শীতের রোদের মত
তপ্ত যত মিষ্টি তত,
মিতা তুমি পদ্ম-মধুর,- অমৃত-বৃষ্টি!
লোভের জিনিস! তাতারসি! তুমি কি মিষ্টি!

রসের ভিয়ান্ বার ক’রে ভাই গুড় করেছে কে?
– গুড় করেছে গৌড়বঙ্গ বনের গাছ থেকে;
গুড়ের জনম-ঠাই এ ব’লে
জগৎ এরে গৌড় বলে,
মিষ্টি রসের সৃষ্টি মানুষ এই দেশে শেখে;
রসের ভিয়ান্ বার করেছি আমরা মন থেকে।

গুড় করেছে গৌড়-বঙ্গ- আদিম সভ্য দেশ,
‘গৌড়ী’ গুড়ের ছিল রে ভাই আদরের একশেষ;
সেই গুড়েতেই মিশ্ৰী ক’রে
ধন্য হ’ল মিশর,- ওরে!
সেই গুড়েতেই করলে চীনি চীন সে অবশেষ,
মিষ্টি রসের সৃষ্টি প্রথম করেছে মোর দেশ।

রসের ভিয়ান্ বার করেছি আমরা বাঙালী,
রস তাতিয়ে তাতারসি, নলেন্ পাটালি।
রসের ভিয়ান্ হেথায় সুরু
মধুর রসের আমরা গুরু,
(আজ) তাতারসির জন্মদিনে ভাবছি তাই খালি-
আমরা আদিম সভ্য জাতি আমরা বাঙালী।

তাতারসির আমোদ নিয়ে আমরা এলাম, ভাই!
মৌমাছিদের চাক্ না ভেঙে আমরা মধু পাই।
বছর বছর নতুন বা’নে
নতুন তাতারসির গানে,
আমরা গৌড়-বাংলা দেশের যশের গাথা গাই;
তাতারসির খবর নিয়ে আমরা এলাম ভাই।

বইছে হাওয়া তাতারসির সুগন্ধ মেখে,
ক্ষেতের যে ধান পায়স-গন্ধ হ’ল তাই থেকে।
মৌমাছিরা ভুল ক’রে ভাই
গন্ধে মেতে ছুট্ল সবাই;
উঠ্ল মেতে দেশের ছেলে প্রথম রস চেখে,
মোণ্ডা-মিঠাই রুচল না আজ রসের রূপ দেখে।