ধল গ্রামে প্রথম যখন হলো ধলবাজার

ধল গ্রামে প্রথম যখন হলো ধলবাজার।
বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ে এলেন দোকানদার।।
যার যাহা ভালো হয় বুঝে তারা নিল।
ভুশিমালের দোকান এক মহাজনের ছিল।।
বর্ষাতে একেবারে বেকার ছিলাম।
মহাজনের দোকানে চাকরি নিলাম।।
চাকরির বিনিময়ে যে বেতন নিতাম।
তা নিয়ে পিতামাতার কাছে দিতাম।।
তখন ব্রিটিশ শাসন এই দেশে ছিল।
বড়দের শিক্ষার জন্য রাত্রে স্কুল দিল।।
তৈমুর চৌধুরী তখন মাস্টারি নিলেন।
নিরক্ষর সবাইকে জানিয়ে দিলেন।।
সুযোগ পেয়ে আমি সেই স্কুলে ভর্তি হই।
বিনা মূল্যে দিল একটি বড়দের বই।।
পরে শুনি এই স্কুলে শিক্ষা যারা পাবে।
নাম দস্তখত শিক্ষার পরে যুদ্ধে নিয়ে যাবে।।
এই মিথ্যা গুজব-বাণী গ্রামে যখন এল।
পড়িতে কেউ আসে না আর স্কুল বন্ধ হলো।।
বড়দের বই আমার হয়ে গেল সাথি।
প্রয়োজন আছে তাই পড়ি দিবা রাতি।।
অক্ষরজ্ঞান আমার হলো তাড়াতাড়ি।
পুঁথি পুস্তক তখন পড়তে আমি পারি।।
জানার জন্য বিভিন্ন বইপুস্তক পড়ি।
গান গাই আর উপস্থিত রচনা করি।।
একতারা নিয়ে আমার একা গান গাই।
এক মনে চেষ্টা করি বাউল হতে চাই।।
রাত্রে খাওয়ার পরে সময় যখন পাই।
উস্তাদ করম উদ্দিনের কাছে তখন যাই।।
সঙ্গীতপ্রিয় লোক ছিলেন জ্ঞানে মহান।
দোতারা বাজিয়ে গাইতেন ভক্তিমূলক গান।।
প্রতিদিন উস্তাদের সঙ্গ করতে পারি।
উস্তাদের বাড়ির পাশে ছিল আমার বাড়ি।।
আসদ্দর আলী হলেন উস্তাদের পুত্র।
তিনিও ধরলেন এই বাউল গানের সূত্র।।
ঈদ এসেছে ঈদের দিন বাড়িতে ছিলাম।
জামাতে যাইতে সবার সঙ্গ নিলাম।।
গ্রামের দুই এক মুরব্বি মোল্লাগণ সাথে।
ধর্মীয় আক্রমণ এল ঈদের জামাতে।।
জামাত আরম্ভের পূর্বে মুরব্বি একজন।
ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাস করলেন তখন।।
জানতে চাইলেন, গান গাওয়া পারে কি পারে না।
ইমাম বললেন, গান গাওয়া আল্লা-নবির মানা।।
মুরব্বি বললেন, তবে জিজ্ঞাস করো তারে।
গান সে ছাড়বে কিনা বলুক সত্য করে।।
ইমাম বললেন, কিতা জি বাঁচতে এখনো পার।
তওবা করে বেশরা বেদাতি কাম ছাড়ো।।
সবার কাছে প্রথম বলো আমি এসব করব না।
আমি বললাম, সত্য বলি গান আমি ছাড়ব না।।
মুরব্বি বললেন, দেখ কী করা যায় তারে।
সবার সামনে এই কথা বলতে কি সে পারে?
যাই করুক এখন বলা উচিত ছিল তার।
এই সমস্ত কর্ম আমি করিব না আর।।
আমি বললাম, এসেছি আজ জামাত পড়িতে।
ইচ্ছা নয় মিথ্যা কোনো কথা বলিতে।।
ছাড়তে পারব না আমি নিজে যখন জানি।
উপদেশ দিলে বলেন কী করে তা মানি।।
পরে করিব যাহা এখন বলি করবো না।
সভাতে এই মিথ্যা কথা বলতে পারব না।।
এই সময় অন্য এক মুরব্বি বললেন।
আপনারা এখন কোন পথে চললেন।।
এই আলাপ ঘরে বসে পারি করিতে।
এখন এসেছি ঈদের নামাজ পড়িতে।।
এক গ্রামে বাস করি হিন্দু-মুসলমান।
কে না গেয়েছি বলেন জারি সারি গান।।
একতারা দিয়ে গায় একা গান তার।
ঈদের জামাতে কেন এই গানের বিচার?
এই আলোচনা এখন বন্ধ করেন।
নামাজ পড়তে এসেছি নামাজ পড়েন।।
মুরব্বি হতে এই কথা যখন এলো।
এই বিষয় এখানেই শেষ হয়ে গেল।।
জামাত শেষ হলে পরে আসিলাম বাড়িতে।
কী করিব গান যে আমি পারি না ছাড়িতে।।
মনে ভাবি দয়াল যাহা করেন আমারে।
আমার নৌকা ছেড়ে দিলাম অকূল পাথারে।।

আত্মসৃতি-২