গানের আসরে যখন গান গাইতে যাই

গানের আসরে যখন গান গাইতে যাই।
অনেক মহাজনের গান তখন গাই।।
সকল মহাজনের গানে একই কথা বলে।
পির মুর্শিদ ভজিতে হয় আপন জানতে হলে।।
কামেল মুর্শিদের সঙ্গ করা দরকার।
গুরু ব্যক্তি কেমন হবে ভেদ জানি না তার।।
একদিন বসিলাম এক মহাজনের কাছে।
জিজ্ঞাস করলাম, আমার মুর্শিদ কোথায় আছে।।
তিনি বললেন, পূর্বে নিজের মন ঠিক করে লও।
পরে এই মহান কাজে ব্রতী হও।।
বলিলেন পাবে তারে সে নহে তো দূরে।
আশিক হয়ে খুঁজলে মিলে আছে মাশুকপুরে।।
ঘুরিতে ঘুরিতে মন যথায় গিয়ে রয়।
তথায় তোমার প্রাপ্য বস্তু জানিও নিশ্চয়।।
শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি তিনি সালাম করলাম।
পরে আমি আমার রাস্তা ধরলাম।।
মহাজনের কথা শুনে ভরসা নিলাম।
একদিন পাব বলে আশায় ছিলাম।।
গ্রাম গঞ্জে ঘুরে সদা বাউল গান গাই।
পির ফকির আউলিয়াদের সমাবেশে যাই।।
সৈয়দ শাহনুরের বালক কুরফান আলী ছিল।
শাহনুরের ছুরির নিচে গলা পেতে দিল।।
শাহ কুরফান আলীর বালক ইমান আলী নাম।
সুনামগঞ্জের অন্তর্গত মুক্তাখাই গ্রাম।।
এই গ্রামে ইমান আলী ফকিরের মাজার।
উরস হয় ফাল্গুন মাসের প্রথম সোমবার।।
মনে জেনে এই উরসে অংশ নিলাম।
বাউল আসকর আলী এবং আমি ছিলাম।।
সারা রাত্র দুই জনে গান সেদিন গাইলাম।
এই উৎসবে একজনের দেখা পাইলাম।।
উকারগাঁও জন্মস্থান মৌলা বক্স নাম।
দেখা পেয়ে পূর্ণ হইল মনস্কাম।।
মৌলা বক্স মুন্সি একজন আলেম ছিলেন।
সুফি মতবাদে পূর্ণ বিশ্বাস নিলেন।।
মুন্সি সাহেবের মুর্শিদ আব্বাস ক্বারি নাম।
সুনামগঞ্জের নিকটে সাধকপুর গ্রাম।।
সাধকপুর ক্বারি সাহেবের মাজার হয়েছে।
এই গ্রামে ক্বারি সাহেবের বংশধর রয়েছে।।
ক্বারি সাহেবের কথা শুনতে যাহা পাই।
বর্তমান ইতিহাসে লিখা তাহা নাই।।
ক্বারী সাহেবের যারা শিষ্যত্ব নিলেন।
এর মধ্যে অনেকেই আলেম ছিলেন।।
উরস হয় নির্দিষ্ট তারিখ আছে তার।
ফাল্গুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার।।
ক্বারি সাহেব মহাসাধক ছিলেন।
মৌলা বক্স মুন্সি সাহেব শিষ্যত্ব নিলেন।।
মুন্সি সাহেবকে দেখে ভাবনায় পড়লাম।
মুর্শিদ ভজিতে মনে সিদ্ধান্ত করলাম।।
তখন আবার আপন মনে করি এই বিচার।
পিতা-মাতার হুকুম নেওয়া আমার দরকার।।
মনের কথা কই না কারে মনে মনে আছে।
বাড়িতে আসিলাম আমার পিতামাতার কাছে।।
পিতা মাতার আদেশ নিতে সমস্যায় পড়লাম।
রাত্রে নীরবে মাকে জিজ্ঞাসা করলাম।।
বললাম, মাগো আমি মুর্শিদ ভজতে চাই।
ভালো কাজ এতে কোনো সন্দেহ যে নাই।।
আলেম কামেল ব্যক্তি ত্বত্তজ্ঞানী লোক।
সুফিবাদে বিশ্বাসী পরম ভাবুক।।
মা বললেন, তুমি আমার একমাত্র ছেলে।
মুর্শিদ ভজিতে হয় বয়স প্রাপ্ত হলে।।
এখন মুর্শিদ ভজিতে কে বললেন তোমায়।
মুর্শিদ ভজলে মানুষ নাকি পাগল হয়ে যায়।।
আমি বললাম, একটি কথা আমার মনে পড়ে।
যে যার সঙ্গ করে সে তার বর্ণ ধরে।।
এই মানুষের সঙ্গ করে হব না বেহুঁশ।
ভোগী নয় ত্যাগী এই মহাপুরুষ।।
মা বললেন, তুমি যদি ভালো মনে কর।
তোমার পিতার আদেশ নিয়ে এই রাস্তা ধর।।
আমি বললাম, মাগো আমি পিতাকে ভয় পাই।
আদেশ নিয়ে দাও গো মা আমি যাহা চাই।।
মনে ভাবনা ছিল কী হইবে পাছে।
মা আমার প্রস্তাব নিয়ে গেলেন পিতার কাছে।।
এখানেই ভয় ছিল পিতা কি বলেন।
স্থির ধীর ভাবে মা উপস্থিত হলেন।।
মা যাহা জিজ্ঞাসা করেন শুনে নিলাম।
আমি মায়ের কাছে আড়ালে ছিলাম।।
মা বললেন, ছেলে আপনার আদেশ নিতে চায়।
সে আপনার কাছে বলতে ভয় পায়।।
একজন কামেল লোক তার চোখে পড়েছে।
মুর্শিদ ভজিবে মনে আশা করেছে।।
আলেম কামেল ব্যক্তি অতি প্রাচীন লোক।
শ্রদ্ধার পাত্র তিনি পরম ভাবুক।।
পিতা বললেন, জানি আমি সে এসব বলিবে।
পির চাচা নসিব উল্লার মতে সে চলিবে।।
ভালো কাজে চলে যদি ভালো বিবেচনায়।
উদ্দেশ্য সৎ হলে আল্লাহ তার সহায়।।
পিতা-মাতা অনুমতি দিলেন যখন।
আমার অন্তরে শান্তি আসিল তখন।।
মনে ভাবি দয়াল আমার সহায় ছিলেন।
পিতা-মাতা ভালো মনে বিদায় দিলেন।।
পিতা-মাতার চরণ ধুলি মস্তকে লইলাম।
পরের দিন ভোরবেলা রওয়ানা হইলাম।।
পনেরো মাইল দূরে হইল মুর্শিদের বাড়ি।
মনে চায় যত শীঘ্র যাইতে আমি পারি।।
মুর্শিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিলাম।
মুক্তাখাই গ্রামে আছেন খবর পাইলাম।।
সেখানে গেলাম আপন কর্ম সারিতে।
দেখা হলো মুবারক শাহ ফকিরের বাড়িতে।।
মুর্শিদের সঙ্গে দেখা হইল যখন।
বাউল আসকর আলী ছিলেন তখন।।
এই রাত্র মুবারক শাহর বাড়িতে রইলাম।
আমি এবং আসকর আলী মুরিদ হইলাম।।
মুর্শিদ ভজিতে মনে বড় আশা ছিল।
মুর্শিদ আমায় দয়া করে কোলে তুলে নিল।।
মুর্শিদের কাছে যখন মুরিদ হইলাম।
কয়েক দিন মুর্শিদের কাছে রইলাম।।
মুর্শিদের ভক্তবৃন্দ অনেকেই ছিল।
সবাই আমায় ভালোবেসে কাছে স্থান দিল।।

আত্মসৃতি-৪