পিরিতি কি সকলে জানে

পিরিতি কি সকলে জানে
পিরিতি যার ফলে সিদ্ধি হয় দুই কুলে
অকূলে কূল মিলে বলে মহাজনে।।

পিরিতি রতন জেনে করো যতন
মাশুক কী ধন আশেকে জানে।
তয়মুসের বালিকা নামে বিবি জ্বলেখা
একদিন ইউসুফের দেখা পাইল স্বপনে।।

স্বপনে দেখিল, রূপ নয়নে লাগিল
পাগল হয়ে গেল সেই রূপধ্যানে।
পাগলিনীর প্রায় যথা তথা যেতে চায়
বাপে বেড়ি দিয়া রাখে সাবধানে।।

পাগল হয়ে গেল হুঁশবুদ্ধি হারালো
নিদ্রা নাই আর দুই নয়নে।
অঘোর চিন্তায় একদিন ধরিল নিদ্রায়
সেই রূপ এসে দেখা দিল স্বপনে।।

জিজ্ঞাসা যায় করিয়া আকুল হইয়া
কাঁদো গো জ্বলেখা কী কারণে।
ইউসুফ আমার নাম পরিচয় দিলাম
মিশরে বাড়ি আমি থাকি সেখানে।।

স্বপন দেখিল বিবি ভালো হয়ে গেল
বিবাহ বসিতে কয় নিজের জবানে।
স্বপনের ইশারা-মতে মিশরের ইউসুফের সাথে
শাদি বসিল বিবি আনন্দ মনে।।

জুলেখা দেখে চাহিয়া মিথ্যা বলিয়া
এখনও ইউসুফ রহিল গোপনে।
কাঁদে জ্বলেখায় জানি না কিসের দায়
দেশ-খেশ ছাড়াইয়া মারিলে প্রাণে।।

স্বপনে আসিয়া গেল শান্তি দিয়া
উজিরের ঘরে থাকো যতনে।
উজিরের ঘরে থাকো আমারে মনে রাখো
দিন পুরিলে পাবে সামনে।।

একদিন শোনে জুলেখায় মানুষে বলে যায়
চাঁদ উঠেছে যেমন জমিনে
বিদেশী এক সওদাগরে ইউসুফ নামে এক জনেরে
বিক্রি করতে আনিল এখানে।।

জুলেখা শুনিয়া বলে ধনরত্ব দিয়া
ইউসুফকে কিনিব যতনে।
যদি ধনরত্নে না কুলায় আমি ইউসুফের পায়
বিকাইয়া যাব আমার জিয়ন-মরণে।।

ইউসুফরে কিনিল সপ্তমখানা বানাইল
কত কিছু করিল ইউসুফের কারণে।
জুলেখা যত চায় ইউসুফ দূরে দূরে পলায়
প্রেমের আগুন হয়ে দ্বিগুণ বাড়ে দিনে দিনে।।

এত কাঁদা কাঁদিল নয়ন অন্ধ হইল
ছাই পড়িয়া গেল রূপযৌবনে।
একদিন কর্ণে শুনিল ইউসুফ রাস্তায় চলিল
পড়িয়া রহিল ঘোড়ার সামনে।।

ইউসুফে দেখিয়া জিজ্ঞাসা যায় করিয়া
রাস্তার উপরে গো বুড়ি কী কারণে।
বলে জুলেখায় পড়ে আছি রাস্তায়
ইউসুফকে দেখিতে বাসনা মনে।।

ইউসুফ পরিচয় পাইয়া জিজ্ঞাসা যায় করিয়া
এখনও কি সে কথা তোর রয়েছে মনে।
জুলেখা বলে তার পরীক্ষা চাহিলে
হাতের চাবুক ধরো আমার মুখের সামনে।।

পরীক্ষার লাগিয়া হাতের চাবুক নিয়া
ধরে ছিল জুলেখার মুখের সামনে
জুলেখা ইউসুফ ইউসুফ বলিয়া উঠিল কাঁদিয়া
হাতের চাবুকে গিয়া ধরিল আগুনে।।

ইউসুফে দেখিয়া সাথি সঙ্গী নিয়া
প্রার্থনা করিলেন জুলেখার কারণে
দোয়া কবুল হইল জুলেখার দুঃখ দূরে গেল
সাজিল বুড়ি আবার নবযৌবনে।।

নির্মল প্রেমে মজেছিল জগতে ধন্য রইল
প্রশংসা লেখিল কোরানে।
আবদুল করিম বলে প্রেমে প্রাণ দিলে
ভয় কী রে জিয়ন-মরণে।।

(প্রণয়গীতি)