পল্লীগ্রামের কবি আমি পল্লীর গান গাই

পল্লীগ্রামের কবি আমি পল্লীর গান গাই
স্বাধীন দেশে শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চাই
তাই তো মনে পড়ে।।

মনে পড়ে, বারেবারে ভুলিতে না পারি
শোষক আর শোষিতে লাগিল মারামারি
জাগো সর্বহারা।।

সর্বহারা, শোষিত যারা আমরা ভাই ভাই
এবার করিতে হবে মুক্তির লড়াই
মানুষ মুক্তির তরে।।

মুক্তির তরে, চলছে জোরে জীবন করে পণ
দেশে দেশে চলছে রোষে মুক্তিযুদ্ধের রণ
মুক্তির আলোকে।।

মুক্তির আলোকে, লাখে লাখে লড়ছে বীরের দল
সমাজতন্ত্রের ঝড় উঠেছে হইয়া প্রবল
সারা বিশ্বজোড়া।।

বিশ্বজোড়া, সর্বহারা জাগিল এবার
শোষকের ইমারত ভেঙে হবে চুরমার
অতি তাড়াতাড়ি।।

তাড়াতাড়ি, নাই দেরি শোনো সমাচার
জনসমুদ্রে এল বিপ্লবী জোয়ার
শোষকের বাঁধ ভাঙিয়া।।

বাঁধ ভাঙিয়া, চলছে ধাইয়া সারা দুনিয়ায়
আফ্রিকা এশিয়া এবং লেটিন আমেরিকায়
এবার পাকিস্তানে।।

পাকিস্তানে, শোষকগণে বিপদ দেখিয়া
আইয়ুব-মোনায়েমকে নিল সরাইয়া
বসে গোলটেবিলে।।

গোলটেবিলে, সবে মিলে পরামর্শ করে
আইয়ুবের আসনে বসায় ইয়াহিয়ারে
অতি কৌশল করে।।

কৌশল করে, ইয়াহিয়ারে সামনে এনে ধরে
পুরান মদ নতুন বোতলে দিল ভরে
নতুন রঙ ধরিল।।

রঙ ধরিল, আশা দিল গণতন্ত্র দিবে
এবার ভাবছে ভোটের ফাঁদে মোদেরে ঠেকাবে
খালি ধোঁকাবাজি।।

ধোঁকাবাজি, কী কারসাজি দেখ না ভাবিয়া
ভোটের মাঠে নেমে গেল সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়া
যারা ভোটশিকারী।।

ভোট শিকারী, তাড়াতাড়ি দেরি না করিয়া
ভোটের বাজার গরম করল ঢাক-ঢোল পিটাইয়া
দালাল টাউট যারা।।

দালাল যারা, এবার তারা মহা সুযোগ পাইয়া
দেশদরদি সাজল তারা স্বার্থের ছালা লইয়া
পকেট গরম হইল।।

গরম হইল, লেগে গেল ভোটের লড়াই
কেউ বলে বাঙালি জাগো স্বাধীন বাংলা চাই
লাগল মারামারি।।

মারামারি, ঢাকার বুকে ভোটার লিস্টি লইয়া
বিহারী আর বাঙালিতে রায়ট গেল হইয়া
বাজার জমল ভালো।।

জমল ভালো, নৌকায় দিল রঙিন বাদাম
শেখ মুজিব টাইটেল পাইলেন বঙ্গবন্ধু নাম
মনে আশা ছিল।।

আশা ছিল, পূর্ণ হইল বাড়লো মনোবল
ধর্মের জিকির লয়ে হাজির হলেন আরেক দল
ও ভাই ধর্ম গেল।।

ধর্ম গেল, সমাজতন্ত্র আসে যদি ভাই
সমাজতন্ত্রের মধ্যে কোন ধর্মাধর্ম নাই
আসবে দুর্নীতি।।

দুর্নীতি, হবে ক্ষতি ধর্ম রবে না
তারা আরম্ভ করলেন এসব তালবাহানা
গরিবের উপায় নাই আর।।

উপায় নাই আর, বাঁচার জোগাড় নাই কোনো মতে
গরিবের উপায় কেবল জীবনরক্ষার পথে
বলছেন ধর্ম রয় না।।

ধর্ম রয় না, মাখন ছানা ধনী যদি খায়
গরিব মরে অনাহারে ধর্মে ভালো পায়
বড় মজার ব্যাপার।।

মজার ব্যাপার, ধনতন্ত্রের নীতি থাকলে পরে
ধর্ম বড় তাজা থাকে আমেরিকার জোরে
এই তো মূলমন্ত্র।।

মূলমন্ত্র, সমাজতন্ত্র আসে যদি ভাই
ধনীদের চলে যাবে জীবনের কামাই
তাইতো মাথায় বাড়ি।।

মাথায় বাড়ি, মারামারি যার-তার স্বার্থ নিয়া
ভোট শিকার করিবে এবার ধর্মের ভাওতা দিয়া
এই তো মূল কথা।।

মূল কথা, ধর্মের ভাওতা তাহার লাগিয়া
কেহ এলেন লেলিনবাদের মুখোশ পরিয়া
তারা কৃষক দরদি।।

কৃষকদরদি, মজুরদরদি লীলার অন্ত নাই
তারা বলে ভোট দাও সংগ্রাম করতে যাই
গিয়া এ্যাসেমব্লিতে।।

এ্যাসেমব্লিতে, শোষকের সাথে করিব সংগ্রাম
এজন্য আমরা এবার ভোটে দাঁড়াইলাম
বলছেন কৌশল করে।।

কৌশল করে, জোরেসোরে দাদা বড় মুনি
পাহাড়েতে বাঁশ কাটেন বাড়ি থেকে শুনি
খালি ধোঁকাবাজি।।

ধোঁকাবাজি, মূল পুঁজি ভোট নেওয়া ভাই
ভোট শিকারীর পথেরে গরিবের মুক্তি নাই
দেখ ইতিহাসে।।

দেখ ইতিহাসে, মুক্তি আসে কোন পথে ভাই
ধোঁকাবাজের সঙ্গ ছাড়ো নইলে মুক্তি নাই
একমাত্র বিপ্লব ছাড়া।।

বিপ্লব ছাড়া, সর্বহারা বাঁচার উপায় নাই
তিন ডাকাত হয় দেশের কর্তা জানোতো সবাই
বড়টা সাম্রাজ্যবাদ।।

সাম্রাজ্যবাদ, বড় প্রমাদ সকলেরই জানা
মধ্যম জন শহর বন্দরে করে আমিরানা
ধনের মালিক হইয়া।।

মালিক হইয়া, মানুষ লইয়া পুতুল খেলা খেলে
কৃষক-মুজুরের রক্ত টানে পূজির বলে
পরে ছোটো জনে।।

ছোট জনে, নিশিদিনে করতেছে শোষণ
আমলা মুৎসুদ্দি আর জোতদার মহাজন
তার শোষণেতে।।

শোষণেতে, কোনো মতে বাঁচার নাই জোগার
দিবানিশি সার করেছে জুলুম অত্যাচার
দুঃখ কইতে নারি।।

কইতে নারি, সইতে নারি এ কী জ্বালাতন
তার হাতে গ্রাম বাংলার গরিবের মরণ
গরিব ঠেকছে ফেরে।।

ঠেকছে ফেরে, বাঁচবে নারে টাকা আছে যার
মানুষ মারার কল-কৌশল সকলেই যে তার
সে শাসন ক্ষমতায়।।

শাসন ক্ষমতায়, আছে সদায় নানা রঙ্গ ধরে
মেহনতি মজুরকে সে পশুর মত মারে
স্বার্থের আঘাত হইলে।।

স্বার্থের আঘাত হইলে, সে মারিলে নাই কোনো বিচার
তার হাতে শাসনক্ষমতা সকলেই যে তার
এবার রুখতে হবে।।

রুখতে হবে, বাঁচতে হবে সবারে জানাই
শোষণমুক্ত না হইলে শান্তির আশা নাই
জাগো সর্বহারা।।

(দেশের গান)