নিরুদ্দেশ যাত্রা

অলৌকিক অদ্ভুত দ্রব্যাদি সব খেয়ে-দেয়ে বাঁচি
সুহৃদের তিরস্কার বাতাসের সাথে সাথে এসে
লুটোয় টেবিলে, উল্টে দেয় সাধের গেলাস আর
নীল বাক্সো ম্যাচিসের ময়ূরের বর্ণালী পালক-

শব্দহীন ঝ’রে পড়ে দূর বাল্যকালে কেনা, ওই
লাবণ্যের নিঃসঙ্গ পুতুল আর সবুজ রঙের
টুপি থেকে; অগ্রজের তীক্ষ্ণ ভৎসনায় বজ্র যেন
জানালায় যমদূতের মতন ত্রাস নেচে নেচে

কেবলই দেখিয়ে যায়, গহ্বর, কবর আর ম্লান
পাণ্ডুর রোগের রাত স্বপ্নহীন শীতার্ত শয্যায়;
প্রিয়তম মহিলার উদ্বিগ্ন, করুণ, রাগী স্বর,-
নাকে মুখে নম্র নখের আঁচড়,- বৃষ্টির ঝাপট,-

প্রতিবাদমুখর চিৎকারে যেন তারা নেভায় প্রদীপগুলো
স্বর্গের গোপন ধাপে-ধাপে আমি যা রেখেছি যত্নে,
একদা চয়ন ক’রে সভ্যতার মৃত অন্ত্র ছেনে,
কোনমতে শুঁকে-শুঁকে, ভয়ে, সরল জিহ্বায় চেখে

ইন্দ্রিয়সর্বস্ব, ক্ষুধামত্ত জন্তু যেন একরোখা।
দেখেছি প্রখ্যাত ক্ষেত, -নষ্টফল, -নক্ষত্রের মতো
দ্রাক্ষা, ইক্ষু, গম, সর্ষে আর জ্যোৎস্না আর ফাঁকা তাঁবু,
ঈশ্বরের উজ্জ্বল নীলিমা, -সন্ধিৎসু সন্তের মনে

সুন্দর সূর্যাস্ত থেকে ভোরবেলাকার সূর্যোদয়
পর্যন্ত হেঁটেছি। আর অসীম অধৈর্যভরে ঘেঁটে,
সেই চঞ্চল, পিচ্ছিল জরায়নে সভয়ে দেখেছি
শয়তানের ধমল মুখ : শূন্যতার বস্ত্রে মোড়া,

জরা, মৃত্যু, আর্তির চন্দন-ফোঁটা তার অবয়বে,
প্রশান্ত করেছে তাকে সন্ধ্যার মতোই আগাগোড়া,
আততায়ী, -লুকিয়ে রয়েছে প্রেমিকার অনুনয়ে,
অনুজের মূল্যবোধে, আমাদের উদ্বাস্তু দশকে

প্রগতির অন্বেষায় আর প্রতিক্রিয়ার হঠাৎ
পিছুটানে, যত্রতত্র সমৃদ্ধির সকল খবরে,
সংবাদপত্রে ও মানুষের অন্তিম গন্তব্যে, আর
ক্রুদ্ধ সম্পাদকীয় মন্তব্যে।
ফলত নিঃশব্দে নেমে পড়ি
কবিতার শুঁড়িলোকে, মদ্যপের কণ্ঠনালী বেয়ে
মিশে যাই পাকস্থলীর, প্লীহার অম্ল রসায়নে।