নপুংসক সন্তের উক্তি

শর্করার মতো রাশি রাশি নক্ষত্রবিন্দুর স্বাদে
রুচি নাই, ততটাই বিমুখ আমরা বন্ধুদের
উজ্জ্বল সাফল্যে অলৌকিক। কে গেল প্রাসাদে আর
সেই নীল গলির গোকধাঁধা কার চোখে, ঈর্ষায় কাতর

কেবা (হয়তো-বা আমরাও)। দ্রুত তিমিরে তলাবে
গদ্যের বদলে যারা সুললিত পদ্যে সমর্পিত-
টেরী কাটা মসৃণ চুলের কবি, পাজামা-পাঞ্জাবি
হাওয়ায় উড়িয়ে হাঁটে তারা আজীবন নিশ্চিন্তে নরক-ধামে,

এবং চৈতন্যে নেই অবিরাম অনিশ্চিত, অশেষ পতন
পলে-পলে স্খলনের অঙ্গীকার আর অনুর্বর মহিলার
উদরের মত আর্ত উৎকণ্ঠিত, আবর্তিত শূন্যতার ভার,
নেই এই ভীড়াক্রান্ত, বিব্রত, বর্বর ঊর্ধ্বশ্বাস শহরের

তীক্ষ্ণধার জনতা এবং তার একচক্ষু আশার চিৎকার।
পূর্ণিমা-প্রেতার্ত তারা নির্বীজ চাঁদের নীচে, গোলাপ বাগানে
ফাল্গুনের বালখিল্য চপল আঙুলে, রুগ্নউরু প্রেমিকার
নিঃস্বপ্ন চোখের ‘পরে নিজের ধোঁয়াটে চোখ রাখে না ভুলেও,

কল্পমান অবিবেকী হাতে গুঁজে দেয় ম্লান ফুল
পীতাভকুন্তলে তার, প্রথামতো সেরে নেয় কবির ভূমিকা,
ইতিহাসের আবহে নাকি আজ এ সকলই ঐতিহ্যসম্মত,-
এই নির্বোধ আনন্দ-গান, ওই অনাত্ম উৎসব।

আমরাই বিকৃত তবে? শান্ত, শুদ্ধ এই পরিবেশে
আতর লোবান আর আগরবাতির অতিমর্ত্য গন্ধময়
দেবতার স্পর্শ-পাওয়া পবিত্র গ্রন্থের উচ্চারণে
প্রতিধ্বনিময় শব্জীক্ষেতের উদার পরিবেশে

সুপ্রচুর বিমুক্ত হাওয়ায় কেন তবে কষ্টশ্বাস?
কেন এই স্বদেশ-সংলগ্ন আমি, নিঃসঙ্গ, উদ্বাস্তু,
জনতার আলিঙ্গনে অপ্রতিভ, অপ্রস্তুত, অনাত্মীয় একা,
আঁধার টানেলে যেন ভূ-তলবাসীর মতো, যেন

সদ্য উঠে-আসা কিমাকার বিভীষিকা নিদারুণ।
আমার বিকট চুলে দুঃস্বপ্নের বাসা? সবার আত্মার পাপ
আমার দু’চোখে শুধু পুঞ্জ পুঞ্জ কালিমার মতো লেগে আছে?
জানি, এক বিবর্ণ গোষ্ঠীর গোধূলির শেষ বংশজাত আমি,

বস্তুতই নপুংসক, অন্ধ, কিন্তু সত্যসন্ধ দুরন্ত সন্তান।
আমাকে এড়ায় লোকে, জাতিস্মর অবচেতনার পরিভাষা
যেহেতু নিয়েছি আজ নিষ্করুণ আর্তস্বরে সাহসীর মতো,
তাই অগ্রজের আয়োজন শুরু হয় বধ্যভূমির চৌদিকে

আমাকে বলির পশু জেনে নিয়ে, উজ্জ্বল আতসবাজি আর
বিচিত্র আলোক সাজে ঢেকে দিয়ে রাত্রির আকাশ
দেখায় আবার ভেল্কি কাড়া-নাকাড়ায় সাড়া তুলে
যূথচারী মানুষেরে। এবং আমার শরীরের শজ্বীক্ষেতে
অসীম উৎসাহভরে একটি কবর খুঁড়ে রাখে।