উত্তরাধিকার

জন্মেই কুঁকড়ে গেছি মাতৃজরায়ন থেকে নেমে-
সোনালি পিচ্ছিল পেট আমাকে উগরে দিলো যেন
দীপহীন ল্যাম্পপোস্টের নীচে, সন্ত্রস্ত শহরে
নিমজ্জিত সবকিছু, রুদ্ধচক্ষু সেই ব্ল্যাক-আউটে আঁধারে।

কাঁটা-তারে ঘেরা পার্ক, তাঁবু, কুচকাওয়াজ সারিবদ্ধ
সৈনিকের। হিরন্ময় রৌদ্রে শুধু জ্বলজ্বলে গম্ভীর কামান,
ভোরবেলা সচকিত পদশব্দে ঝোড়ো বিউগুলে
গাছ-পালা, ঘরবাড়ি হঠাৎ বদলে গেছে রাঙা রণাঙ্গনে।

শৃংখলিত, বিদেশীর পতাকার নীচে আমরা শীতে জড়োসড়
নিঃশব্দে দেখেছি প্রেমিকের দীপ্ত মুখ থেকে জ্যোতি ঝরে গেছে
ম্লানমুখো ফিরেছে বালক সমকামী নাবিকের
মরিয়া উল্লাস ধ্বনি আর অশ্লীল গানের কলি

নীর পালকের মত কানে গুঁজে, একা সাঁঝবেলা।
যীশুখৃষ্টের মতন মুখে সৌম্য বুড়ো সয়ে গেছে
ল্যান্টর্নের ম্লান রাত্রে সৈনিকের সিগারেট, রুটি, উপহার
এবং সঙ্গম-পিষ্ট সপ্তদশী অসতর্ক চিৎকার কন্যার।

রক্তপাতে, আর্তনাদে, হঠাৎ হত্যায় চঞ্চল কৈশোর-কাল
শেখালে মারণ-মন্ত্র,- আমার প্রথম পাঠ কি করে যে ভুলি,
গোলাপ-বাগান জুড়ে রক্তে-মাংসে পচেছিলো একটি রাঙা বৌ
ক’খানা ছকের ঘুঁটি মানুষের কথামতো মেতেছিলো বলে।

ছদ্মবেশী সব মুখ উৎসবে লেগেছে ফের, ফেনিল উৎসবে,
কী শান্ত নরম গলা, সন্ধ্যার হাওয়ায় বসে আছে
দু’দিন আগের মুখ, ভালোবাসা-স্তব্ধ-করা আততায়ী-মুখ
সন্তর্পণে নিয়েছে গুটিয়ে যেন আস্তিনের সাথে,

যেন কেউ কামমত্ত ভালুকের মতো করে নাই ধাওয়া কোন
মহিলারে পাতালে নাবানো ঠাণ্ডা কূপের গহ্বরে,
সূর্যাস্তে নির্ভার মনে যেন শোনে নি বোমারু শিস
হঠাৎ কৃষক, দূরে দাউদাউ অন্তিম আগুন তার পড়শির গ্রামে,

লুটিয়ে পড়ে নি কেউ স্বদেশী পার্কের ছবি হাতে
বিদেশীর গমক্ষেতে বাসিমুখে কফির বাটিতে মুখ রেখে।
বালকের মুঠো থেকে খসে গেছে হালকা সূক্ষ্ম সুতো বেলুনের
অচেনা দুর্বোধ্য ত্রাসে, আমার চোখের নীচে, এভেন্যুর ধারে,

নির্বোধের আলস্যে কেবল স্নান হাস্যে জানিয়েছি
মনোরম অস্তরাগে শুধু আমার গোধূলি-ভাষ্য
মূল্যবোধের আর যা কিছু সত্য তাই হতাশার
পরম, বিশ্বস্ত অনুগামী, প্ররোচক বুঝি স্বেচ্ছামরণের,

-এইমতো জীবনের সাথে চলে কানামাছি খেলা
এবং আমাকে নিষ্কপর্দক, নিষ্ক্রিয়, নঞর্থক
ক’রে রাখে; পৃথিবীতে নিঃশব্দে ঘনায় কালবেলা!
আর আমি শুধু আঁধার নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটে রক্তাক্ত জবার মতো

বিপদ-সংকেত জ্বেলে একজোড়া মূল্যহীন চোখে
পড়ে আছি মাঝরাতে কম্পমান কম্পাসের মতো
অনিদ্রায়।