মিষ্টিগুড়ের ইষ্টিশানে

এক পাড়াগাঁ থেকে আরেক পাড়াগাঁয়ে উঠে এলুম
রেলগাড়ি থামলো এসে মিষ্টিগুড়ের ইস্টিশানে
হাতে রইলো টোপর ঝোপর, বড়ি-বেগুন, দাদুর লাঠি
লটবহর বলতে আরশুলা আর পোকায় কাটা প্রচ্ছদ ছেঁড়া
নোংরা বই
মনে রইলো টে-টুই শঙ্খচিল বাগানভর্তি নারকেল গাছের
মাথায় ঝড়
উশিখুশি বাদলের দিন, বাদাবনে হাঁ-করা আলেয়া…এইসব

কলকাতায় চলে এলুম, প্রাণপণ ফাঁকা থেকে একটা ঝাঁকার

মধ্যে যেন
ঐ আলু-পটল মটরশাকের মনের সঙ্গে মন মেলাতে
চলে এলুম কলকাতায়
মাত্র ওটুকুই আজ প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক, গা ঘষাঘষি
বাকিটা নাক-বরাবর দেয়াল গুমে ভেজা জবড়জং বাড়িঘর
আর মাটি বিক্কিরি করে যায় ঠিক দুক্কুরের ফিরিঅলা
বুড়ির মাথার পাকা চুল, দোরগোড়ায় ঘণ্টা নাড়ে পাটনাই ছাগল
কোথায় এলম হে-এ, এ কোথাকে এলম্‌
হর-ঘরকে ঝি-ঝিউড়ি গলি ভেজায় ঝেলম্
অর্থাৎ কিনা, মা-গঙ্গার জল রাস্তার দুপাশে নামছে ঝোরায়

পাথরের খোরায় দম্বল
মা রাঁধতেন অম্বল
চপাৎ-সপাৎ টানতুম।
টানতে টানতে আঙুলগুলো বাধতো টাগরায়
একবার আগ্রায় গেলুম পুজোয়
পেতেনের ওপর কুঁজোয় থাকতো ফটিক জল
মা বলতেন, খোকা জানিস, ঐ জলের নাম জীবন
ঢোক্‌-ঢোক্‌ জল খা, খাবার-দাবার সময়ে খাবি
যখন যা পাবি, এখানে কেউ চায় না
আরশিকে বলে আয়না-
খোকা, ভদ্রতা বজায় রাখবি…

এক পাড়াগাঁ থেকে আরেক পাড়াগাঁয় উঠে এলুম
রেলগাড়ি থামলো এসে মিষ্টিগুড়ের ইস্টিশানে।।