ভালো থেকো

বহুযুগ বাদে এই বৃষ্টি ও মেঘের দিনে শান্তিনিকেতনে
আসা, ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ উধাও খোয়াই
এখনো বুকের কোনো গভীর প্রত্যন্তে দেয় টান
রক্তপাত হওয়া ছিল অনেক সহজ।

তার বদলে
যন্ত্রণাকাতর হয় চক্ষুদুটি, মাকড়সার জাল
পাতায় পাতায় বাঁধে, দমকা বাতাসে ছিঁড়ে যেতে।
অভ্যাস এমনই, ভেবে কষ্ট পাওয়া, স্বচ্ছ সুখ নয়…
নিশ্চিত নিভৃত দুঃখে ভেসে যাওয়া, নিরুদ্দেশ ভাসা
গোয়ালপাড়ার দিকে…
মনে পড়ে এখনো ঊর্মিলা?

মন কি এখনো আছে ছাই-মাজা বাসনের মতো গভীর উজ্জ্বল?
পিতল-বাসনে, জানো, কলঙ্কের নীল
তেঁতুলের ছোঁয়া ছাড়া নিষ্ক্রান্ত হবে না।
সমস্ত পুরনো কথা, জানা কথা- পুনরুক্তি তবু,
মাঝেমাঝে করে ফেলি- যদি ভুলে যাও!
মনীষাও ভুল করে, আমরা দুষি একাকী নির্বোধে!

থাক কূটকচাল আর মনে-পড়াপড়ি!
পশ্চাদ্‌ভ্রমণে থাকে ঝুল-মাখা ঘরের বিলাস
এবারের এলোমেলো থেকে ভাবছি দেব উপহার
কিছু কথা, অভিজ্ঞতা, ভালোলাগা কানালের জল
ভালো হবে?

কিছুদিন ধরে এই রাঢ়মাটি আমাকে ছাড়ছে না
বিকেলে গা ধুয়ে এসে তুলে দেয় স্পষ্ট নিমন্ত্রণ
জঙ্গলের নীলাঞ্জনা…
সে যে কি রক্তের যুদ্ধ! তার উপর সূর্যের সিঁদুরে
ধুন্ধুমার কাণ্ড দেখে দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।
বিশ্বাসের অলিগলি উঠোন আঙিনা
দুহাতে দখল নেয় স্বপ্ন, অবিশ্বাস-
অমোঘ আমিষ গন্ধ ছড়ায় বাতাসে
কষ্ট হয়।
কষ্টের প্রকৃত শিক্ষা এখনো হলো না!
বিনি নিমন্ত্রিণে আসে, কালের ইঙ্গিতে চলে যায়।

সে যাহোক, ভালো আছো?
বিবাহের পরে কিছু মুটিয়েছো বরের সংসারে?
বাতাসের হাতে ঝিলে জল রুলি ছিল এক ঢাল
কোঁকড়া চুল, তাকে রাঙা ক’রে
জঙ্গলমহাল রাঢ় করে তুলেছো কি?
ইচ্ছে হয় দেখে আসি অন্তত একবার, একঝলক।
তারপর মনে হয়, বৃষ্টি হবে, সব ধুয়ে যাবে
সর্বনাশা ছবি ভেঙে উঠে আসবে শাস্ত পরিস্থিতি-
সোনার সংসার, সুখ, ঘরবর, সার্কাস, সিনেমা!
কিছুদিন ধরে এই রাঢ়মাটি আমাকে ছাড়ছে না।

পুড়িয়ে পাখির মতো টুকরো টুকরো করে হবে বনভোজন।
কোনোদিন মনে হয় ৷
যা হয় তা হোক
কিন্তু, তুমি ভালো থেকো
তুমি ভালো থেকো।।