আবার কখন তুমি

তুমি টেলিফোন রেখে দেবার পরেই আচমকা
নিজেকে রবিনসন ক্রুশো মনে হলো।
আমার বুকের
ভেতরটা খুব ক্ষত বিক্ষত এখন এই সকাল বেলায়
ঝাঁক ঝাঁক কাক আর খুব রাগী বকের নখের হামলায়।

‘নির্বাসন, নির্বাসন’ বলে হয় অতিশয় বিদ্রূপপ্রবণ
ঘরের চৌকাঠ, জানালার পর্দা, একাকী চেয়ার,
যাবতীয় পুরোনো দলিল দস্তাবেজ,
আর জুতোজোড়া, যারা সময়ের চুমোয় চুমোয়
বয়স্ক হয়েছে খুব, যাদের বেকুব মুখ একবিংশ শতাব্দীর দিকে
সারাক্ষণ,
রবীন্দ্ররচনাবলী, ডাস ক্যাপিটাল,
এবং অস্তিত্ববাদী দর্শনের বই।

পূর্ণিমার কাছ থেকে পেয়েছি আত্মার রঙ আর
যে-গোলাপ স্বপ্নে দেখি রবীন্দ্রনাথের
করতলে, তাকে জানি প্রেম বলে, প্রেম
প্রেমই, তার বেশি কিংবা কম কিছু নয়।
আমি তো প্রেমের গূঢ় পাঠ নিই হরিণের কাছে,
কখনো বা জ্যোৎস্নাস্নাত নেকড়ের কাছে
এবং শিখেছি ঘৃণা মানুষের ব্যাপক সৌজন্যে বহুদিন।

তুমি টেলিফোন রেখে দেবার পরেই
মমতাবিহীন দীর্ঘ দিপান্তরে আছি।
তুমি কি জানোনা
নানা দিকে উল্টোপাল্টা ছুটতে ছুটতে
বহু কাঁটাবন

বহু বালিয়াড়ি আর দুঃস্বপ্ন-বিমূঢ় অলিগলি
পেরিয়ে এসেছি
তোমার দিকেই আমি এসেছি আখেরে?
তুমি কি জানোনা
আমার গলার
ঈষৎ-কুচকে যাওয়া চামড়া পুনরায়
আশ্চর্য মসৃণ হয় তোমার চুম্বনে?
তুমি কি জানোনা
তোমার সান্নিধ্য পেলে কেমন আপ্লুত, এলোমেলো
হয়ে যায় আমার এ মোতাজিলা মন?

তোমার চোখের মতো এমন গভীর চোখ দেখিনি কখনো,
তোমার সুরেলা কষ্ঠস্বরে যে-মাধুর্য সঞ্চরণশীল, তার
উপমা দুর্লভ আর অনুপম শরীরের আশ্বিন তোমার
এবং তোমার মতো এমন সংস্কার ছিঁড়ে ভালোবেসেছে কি
কখনো আমাকে কেউ?
তবে কেন জেনেশুনে এত ধুধু যোগাযোগহীন
করো বসবাস এই কোলাহল-বিহ্বল শহরে
এমন নিঃসাড়।
আবার কখন হাওয়া, মেঘমালা হবে ভালোবাসা,
প্রতীক্ষায় আছি
প্রতীক্ষায় আছি
প্রতীক্ষায় আছি।