আমাকে কোথায় পাবে?

আমাকে কোথায় পাবে? ডাক পিয়নের
চিঠি বিলি করবার মতো
নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। পৃথিবীর কোনো ভৌগোলিক
সীমানা মানি না আমি; না, আমার কোনো
নির্ধারিত দেশ নেই, সেই কবে পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলেছি।
হাওয়ার মতন আর রোদ্দুরের মতো
ব্যাপ্ত আমি দেশে দেশে। তাই পোষ্টম্যান
ধন্দে পড়ে প্রতিবার, ভুল করে কর্তব্য পালনে।

আমাকে কখনো
খুঁজে পেতে হলে, হে দীপিতা,
আমার তোমাকে ভালোবেসে না-পাওয়ার
মধ্যে তত্ত্বতালাশ চালাতে হবে। যে-গোলাপ কস্মিনকালেও
ফুটবে না তার শূন্যতায়, কখনো যে-মোমবাতি
তোমার টেবিলে জ্বলে লোড শেডিং-এর
রাতে, তার নিভে যাওয়ার ধোঁয়ায়,
পাকা ধান খেতে এসে যে বাদামি হাঁস
শিকারীর গুলীর আঘাতে
সঙ্গিনীকে হঠাৎ হারিয়ে ফেলে খোলা চরে, তার আর্তনাদে,
মুক্তিযুদ্ধে যে যুবার খোয়া গেছে একটি পা,
তার ক্রাচে, মেশিনে নিহত শ্রমিকের বিধবার
অশ্রুজলে, অত্যন্ত বিষণ্ণ জেলেদের প্রতীক্ষায়
আমার ঠিকানা পেয়ে যাবে সুনিশ্চিত।

অনিদ্রার অতিশয় তীক্ষ্ণ ছুরি সেই কবে থেকে
আমাকে খোঁচাচ্ছে ক্রমাগত। মাঝে মাঝে কায়ক্লেশে
জেগে থাকবার ক্লান্তি চোখে অবেলায়
ঘুমের কুয়াশা টেনে আনে,
দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে ঘুমোতে পারি না স্বাভাবিক।
আমাকে কোথায় পাবে? হে দীপিতা, শোনো,
আমার ভুরুতে আর চোখের পাতায় অতীতের
ধুলো জমে আছে, বর্তমান পাঁজরের
প্রতিটি হাড়ের মধ্যে দুন্দুভি বাজায়,
আঙুলে নিয়ত ফোটে ভবিষ্যৎ, যেন স্বর্ণচাঁপা।
আমার ঠিকানা তুমি খুঁজে পাবে দেশ-দেশান্তরে
ভুখ মিছিলের পদ শব্দে, ফাঁসির মঞ্চের মতো
ভীষণ কর্কশ বিরানায় আর কয়েদখানায়
রাজবন্দীদের শিক-পেরুনো দৃষ্টিতে। যে জোরালো
হাত অকস্মাৎ অন্যায়ের মাথা থেকে
মুকুট ছিনিয়ে নেয়, সে-হাতের মুঠোয় এবং
জ্ঞানীর নিশ্বাসলাগা গ্রন্থের পাতায়,
ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়ানো
ঋজু দেশপ্রেমিকের বুকে,
বিপ্লবী কবির আগুনের স্ফুলিঙ্গখচিত, চোখ
ধাঁধানো মালার মতো কবিতায়, যারা
বারুদের গন্ধভরা পথে ও প্রান্তরে
ওড়ায় পায়রা ঝাঁক ঝাঁক
তাদের মিছিলে আর কৃষ্ণকায় কবি পুরুষের
ফাঁসির দড়িতে আমার ঠিকানা জ্বলে নক্ষত্রের মতো।