আমার আয়েশা ফুফু

হঠাৎ কোনো কোনোদিন দুপুরবেলা
কিংবা সুপুরিগাছে ক্রীড়াপরায়ণ রোদের
বিকেলে আমার আয়েশা ফুফুর কথা
মনে পড়ে। কপাল ভেঙে ছিলো তাঁর
যৌবনের উষায়, তারপর আর কস্মিনকালেও
হাতে মেহেদির ছোপ লাগে নি।

থাকতেন তিনি পল্লীর প্রান্ত-সীমায়
বড় একলা ঘরে। কখনো কখনো
তাঁকে দেখা যেতে কুয়োতলায়, কখনো-বা
বাঁশঝাড়ে দাঁড়িয়ে ঘোমটার
অন্তরাল থেকে কি-যেন দেখতেন, দূর আসমানেও
খেতের আলের মতো কিছু আছে কিনা
ভাবতে চাইতেন আমার আয়েশা ফুফু।

এতকাল পরে আজও যখন দেশবাড়িতে যাই, আয়েশা ফুফুর
বাড়ির সামনে দাঁড়াই ভেতরে ডাকে,
ভাবি তিনি, আমার আয়েশা ফুফু,
এক্ষুণি বেরিয়ে আসবেন শাদা গোলাপ-শাড়িটার
আঁচল সামলাতে সামলাতে, চকিতে নাকে
এসে লাগে কবেকার সেমাইয়ের ঘ্রাণ।

এমন খাঁ খাঁ কোনো জায়গা আছে কি কোথাও? এই প্রশ্ন
আমাকে অসীম শূন্যময় সেখান থেকে
দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়,
কোথাও আমি আমার আয়েশা ফুফুকে দেখি না।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। এখনও যখন
গোধূলিতে হঠাৎ আকাশের মুখ কালো হয়ে যায়
মেঘের জটলায়, বৃষ্টি নামে শহর ডুবিয়ে,
অথবা রাতে ঝিল্লীর স্বরে
কিছুতেই ঘুম আসে না, তাকাই শূন্য সুরাইয়ের দিকে,
যখন কান্নায়
ভেঙে পড়ে কোনো পাখি, তখন
আমার আয়েশা ফুফুর বনশিউলি আর
জলবিছুটির গন্ধকোমল মুখ মনে পড়ে।।