আমি তো মেলারই লোক

আমি কি মেলারই লোক? বেলাবেলি এসে গেছি রঙিন চাঞ্চল্যে
এই মুক্তাঙ্গনে আজ? নাগরদোলায় দুলে কিংবা
সবুজ বাদামি শাদা ঘোড়া দেখে দেখে,
মাদল করতাল শুনতে শুনতে,
কোর্তাপরা বাঁদর নাচিয়ে
কেটে যাবে বেলা
অথবা পথের ধারে বেচবো পুতুল,
ঘটিবাটি সূর্যাস্ত অবধি।

আপনার যারা এসেছেন কাছ থেকে দূর থেকে
তারা কি আমার কোনো ইন্দ্রজাল দেখার আশায়
ব্যাকুল উড়িয়েছেন ধুলো পথেঘাটে, ঠেলেছেন ভিড়?

হে দর্শকবৃন্দ
বাঘের মুখের
ভেতর গচ্ছিত রেখে মাথা ফের আনবো নিপুণ
ফিরিয়ে অক্ষত, যদি ভেবে থাকেন তাহলে
প্রতারিত হবেন নিশ্চিত।
না, আমি সে খেলা
শিখিনি কখনও। এমনকি কালো গোল-
টুপির ভেতর থেকে শাদা কবুতর
ওড়ানোর কৌশল অথবা আঙুলের
ডগায় গোলাপ ফোটানোর
মায়াবী কায়দা জানা নেই।
আমার রঙিন তাস নেই, টিনের কৃপাণ নেই,
মুখোশ ইত্যাদি নেই। হে দর্শকবৃন্দ,
শুনুন, আপনাদের কোনো প্রমোদের
আশ্বাস পারি না দিতে। বিশ্বাস করুন,
এই দুঃখে মাথা নিচু করে সরাসরি নির্বাসনে
যেতে ইচ্ছে হয়।

তা বলে এক্ষুণি মেলা দেবেন না ভেঙে
রেগে-মেগে, ‘তুমি আজেবাজে পদ্য লেখো হে বিস্তর,’
বলে গোবেচারী
সীনার মতন আমাকেও অচিরাৎ
দেবেন না ঠেলে
যমের দুয়ারে। যদি অপেক্ষা করেন
কিছুক্ষণ, এই ব্যর্থ আমি, এই অক্ষম আমিও
পারবো দেখাতে কিছু। এই যে দেখুন,
আমার দু’চোখে দগ্ধ গ্রাম বেশুমার,
আমার ললাটে
আহত শহরগুলো ব্যাণ্ডেজসমেত
শুয়ে আছে। দেখুন আমার বুকে রক্তে ভেসে-যাওয়া
মরিয়ম নিঃস্পন্দ কেমন,
আমার বাহুর কোণে ভয়ানক ছিন্নভিন্ন শীতল বাবলু
অঞ্চল; আমার পাঁজরে
শচীন শাঁখারি, রাজমিস্ত্রী জাবেদালি
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে; শরীরে ভীষণ ফুটোগুলো
নগ্ন চক্ষুময়!
আমার চিবুকে কতো ভগ্ন সেতু বারুদের গন্ধে
ভরপুর কতো যে পরিখা,
আমার চোয়ালে লগ্ন লক্ষ্মীবাজারের
সুহাসিনী দেবীর রক্তিম শাড়ি, যেন স্বাধীনতার পতাকা।
আমি তো মেলারই লোক, বেলাবেলি এসে গেছি এই
মণ্ডপের কাছে;
ঘুরবো, থাকবো
নৌকো আর পুতুলের ভিড়ে,
নাগরদোলার কাছে, ঘোড়াদের কাছে।
ঘুরবো, থাকবো
কিছুকাল, চন্দ্রমল্লিকার
ডাকে দেবো সাড়া,
ঘুরবো, থাকবো
তুলে নেবো হাতে জ্যোৎস্নার রুপালি রাখি।
আমি তো মেলারই লোক, দৃশ্যবলী দেখতে দেখতে
কখন হারিয়ে যাবো এক বুক হাহাকার নিয়ে।