বাড়ি ফেরা

বাড়ি ফিরতে রোজ আমি দেরি করে ফেলি,
বড় বেশি দেরি করে ফেলি।
চেনা রাস্তা অলিগলি যতই জটিল হোক, পথ
ভুল করবার কথা নয়, নয় কখনো নিজের বাড়ি
মনে করে অন্য কারো দরজার কড়া নাড়া অস্থির ব্যাকুল।
তবু বাড়ি ফিরতে রোজ দেরি করে ফেলি,
বড় বেশি দেরি করে ফেলি।

কোনো পিছুটান নেই, সূর্যাস্ত দেখার লোভে কোনো
নদীতীরে অথবা টিলায় দাঁড়ানোর অবসর
আজকাল মেলা ভার। পার্কে ব’সে কিংবা ঘাসে শুয়ে
ভাবনা বিলাসে মেতে উঠবো যে, তারও জো নেই সম্প্রতি, তবু
বাড়ি ফিরতে রোজ আমি দেরি করে ফেলি,
বড় বেশি দেরি করে ফেলি।

সে কবে আড্ডার পাট গেছে চুকে, ইদানীং মতান্তর
দাঁত-নখ-বের-করা মনান্তরে বদলে যায় খুব সহজেই,
এমনকি বন্ধুর কাছেও মন খোলা দায়। বার বার
দায়সারা বাক্যালাপে শেষ হয় চতুর আসর।
মাঝে-মধ্যে আমি নিজে কী দারুণ খল হয়ে যাই;
ইতরামি শুঁয়ো পোকা যেন, আমার ভেতর থেকে
ক্রমাগত অতিষ্ঠ বেরিয়ে আসে ভব্যতার পলেস্তারা ঠেলে।
প্রত্যেকে কপট ভেবে প্রত্যেককে কেবলি বিচ্ছিন্ন
হয়ে যাই ঝরে-পড়া পাখিদের মতো দিগ্ধিদিক।
এ কেমন সময় করছে গ্রাস দ্রুত আমাদের?
আড্ডার কোটরে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি শুনে প্রতিদিন
কাটে না আমার বেলা কিংবা কোনো মোহিনীর ডাকে
তাকাই না ফিরে; ইঁদুর-দৌড়েরও আমি কেউ নই,
তবু বাড়ি ফিরতে রোজ দেরি করে ফেলি,
বড় বেশি দেরি করে ফেলি।

বাড়ি ফিরে দেখি, সেখানে কোথাও কোনো
ঘরবাড়ি নেই; অন্ধকারে হাসে বুভুক্ষু শূন্যতা।