বিষাদ আমার পাশে নেই

বিষাদ আমাকে আজ হু হু গোধূলিতে জনহীন
নদীতীরে হাত ধরে নিয়ে
এসে আস্তে বাসিয়ে দিয়েছে। তবে লাল
সূর্য ডুবে গেল কালো মেঘে, মাঝিহীন নৌকা ভাসে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে, মুখোমুখি আমি
এবং বিষাদ নীরবতা
পোহাই, কেমন রিক্ত, ধু-ধু মন; দেখি,
দিগন্তরেখায় খাটে কে যেন শায়িত একা, স্পন্দহীন মমি।
বিষাদ আমাকে বলে হাওয়ার মতোন ফিসফিসে স্বরে, দ্যাখো,
সেখানে নিঝুম তিনি ঢুলছেন বরফের মতো
পাথর নিঃসঙ্গলগ্ন নৈঃশব্দ্যের কঠোর-শীতল
শেকলে সম্প্রতি বন্দি নতুন প্রমিথিউস, যার
যকৃৎ এখন ঠুক্‌রে ঠুক্‌রে খাচ্ছে ক্রূর প্রাচীর ঈগল। মানুষের
জন্যে যাঁরা জ্বালেন জ্ঞানের
মুক্তির প্রখর আলো, রয়েছে তাদের জন্যে অশেষ পীড়ন
আর অমরতা।

খসে-পড়া একটি নক্ষত্র বিষাদের হাতের চেটোয় নাচে, আস্তে মুঠো
বন্ধ করে বিষাদ করুণস্বরে স্বগত-ভাষণে মেতে ওঠে-
আমাদের ঋদ্ধ শওকত ওসমান,
এখন আপনি সীমাহীন নৈঃশব্দ্যে লীন। আপনার
কথকতা নিথর তুষারাবৃত ঝর্ণাধারা, অথচ এখনও
কত কথা বলবার ছিল; সেসব অব্যক্ত কথা
আজ মেঘে মেঘে, লতাগুলো, প্রবীণ নদীর জলে,
গাছের পাতায় খুব স্তব্ধ হয়ে আছে।

হঠাৎ বিষাদ তার আঙুল উঁচিয়ে ধ্যান থেকে
আমাকে জাগিয়ে তুলে করে ফিসফিস উচ্চারণ, দ্যাখো, দ্যাখো,
ঐ তিনি যাচ্ছেন হেঁটে দ্রুত পায়ে মৌলবাদ আর
ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সভায়। আমি
বিভায় দীপিত তাঁর অনুগামী হই; চেয়ে দেখি আপাতত
বিষাদ আমার পাশে নেই। একাকিত্বে অবিচল
অভ্রচূর্ণে গড়া পথে অবিরাম হেঁটে চলি আর
মরীচিকা-ঝলসিত ধবধবে শূন্যতায় মুখ ঢেকে যায়।