বলা যায় না, তবুও

কোনো কোনো কষ্ট আছে যা, কাউকেই
বলা যায় না, এমনকী নিজেকেও না।

এই তো সেদিন কয়েকটি ঘণ্টা স্বপ্নিল স্বরে
আমাকে কথা দিয়েছিল, বলেছিল
আমার কানে কানে, ‘আমরা তোমাকে দেবো
তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় অনুভূতি,
তোমার হাত ধরে নিয়ে যাব সে এক
সোনালি চূড়ায়, যেখানে তোমার পথে সুন্দরীতমা কোমল
বিছিয়ে রাখবে অনুরাগের পরাগ সমুদয়। কথা দিচ্ছি,
আমরা এই সামান্য ক’টি ঘণ্টা তোমাকে
উপহার দেবো সেই অপরূপ দৃশ্যাবলি,
যা রচনার সাধ্য নেই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকরের’।

সেদিন একটি ছোট ঘর আমাকে
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মেঘমেদুর স্বরে-
‘আমি তোমার জন্যে মেলে ধরব আমার বুক,
সবচেয়ে শীতল সুরভি-মদির
ছায়া দেবো। আমি তোমার নিভৃত আশ্রয় হবো,
যেখানে তুমি দয়িতার উজাড় অন্তরঙ্গতাকে
আকণ্ঠ করবে পান। তোমাদের যুগ্মতা
আমার সামান্য অবয়বকে দেবে অপার মহিমা।
তোমাদের চুম্বন শূন্যে দুলিয়ে দেবে গোলাপচারা,
তোমাদের আলিঙ্গনে চারদেয়ালের ভেতর
ডেকে উঠবে অকাল বসন্তের কোকিল আর
খাট নিমেষে হয়ে যাবে কাশ্মীর-হ্রদের শিকারা’।

কয়েকটি ঘণ্টা আর একটি ছোট ঘর হঠাৎ
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে আমার
একটি অপরূপ স্বপ্নকে মুছে ফেলল এবং আমি
নিজস্ব কষ্টকে বুকের ভেতর পাখির মতো পুষতে লাগলাম।
আমি আমার কবিতার খাতাকে
মিনতি জানালাম, ‘আমার এই কষ্টকে তুমি
একটু ঠাঁই দাও, নইলে আমার শ্বাস
রুদ্ধ হয়ে যাবে এক্ষুণি। তুমি কি সইতে পারবে তা?’

কবিতার খাতা বলে, ‘তোমার মনোজ রৌদ্র-জ্যোৎস্না, জুঁই
চামেলি, দোয়েল, বুলবুল, সোঁদা মাটি, গোস্পদ, ব্যাঙ,
দীর্ঘ সাঁকো, নদীতীরের যমজ গাছ, মেঘনার ঢেউ, পালতোলা নৌকা,
বস্তির ঝুপড়ি, কৃষকের কুটির, মধ্যরাতের স্তব্ধতা, তোমার স্বপ্ন,
দুঃস্বপ্ন, জনপথের কোলাহল, তোমার দীর্ঘশ্বাস, একাকীত্ব
নির্দ্বিধায় ধারণ করেছি আমার বুকে। মার্জনা করো,
তোমার এই কষ্টের জন্যে
জায়গা করে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নেই।

৯.১০.৯৪