বন্ধু তোমাকে

(ফয়েজ আহমদ কারারুদ্ধ হবার পর)

বন্ধু, তোমাকে ওরা বিচ্ছিন্ন করছে
তোমার লেখার টেবিল থেকে, সজীব বাতাসের
স্পর্শ, ফুলের ঘ্রাণ, রবীন্দ্রনাথের গান আর
প্রশস্ত রাজপথে, গমগমে মিছিল থেকে,
তোমাকে ওরা কেড়ে নিয়ে গ্যাছে আপনজন, নিষ্ঠাবান
সহযাত্রীদের কাছ থেকে।

বস্তুত ওরা তোমাকে নিক্ষেপ করেছে কারাগারে,
কেননা তোমার কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছিল সর্বহারাদের
সপক্ষে, গণতন্ত্রের পথ সুগম করার মন্ত্রে;
তুমি আওয়াজ তুলেছিলে
মানবতার জয় হবে বলে।

বন্ধু, এ এক চরম বিপর্যস্ত, হন্তারক সময়ে
আমরা বসবাস করছি,
আমাদের দিনরাত্রি কাটে সন্ত্রাসের ছায়ায়।
কখন কে হারায় প্রাণ ঘাতকের হাতে, কোন্‌
পাড়ায় জ্বলে ওঠে আগুন, এই দুর্ভাবনা
নিত্যদিন আমাদের তাড়া করে। ভাড়াটে গুণ্ডাদের থাবা
অষ্টগ্রহর উদ্যত সজ্জনদের প্রতি।

তুমি কারাগারে বন্দি হবার পরেও
চাঁদ ওঠে আকাশে, যে-চাঁদ শহীদের
রক্ত মাখা মাথা। গাছের সবুজ পাতা চিরে ডেকে ওঠে
কোকিল, কিন্তু রক্তচক্ষু কোকিলের
গলা থেকে আজ গান নয়, বিচ্ছুরিত হচ্ছে শহীদের তাজা খুন।
বিশ্বাস করো বন্ধু, এ দেশের প্রতিটি
প্রগতিশীল কবির হাত
প্রসারিত জেলখানার গরাদের দিকে, যার আড়ালে
ওরা রেখেছে তোমাকে, যাতে তোমার গলার আওয়াজ
পৌঁছুতে না পারে বাইরের জগতে। অথচ জানে না ওরা,
আমাদের প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর আজ তোমারই কণ্ঠস্বর।