বুঝলে হে জগন্নাথ

হুম, বুঝলে হে জগন্নাথ,
আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজ থেকে
তোমাকে কিছুই আর করতে হবে না। না, হঠাৎ
খেয়ালের বশে কিছু করিনি, অনেক ভেবেচিন্তে, নকশা এঁকে,
যাকে বলে সর্বসম্মতিক্রমে এই হলো, দেনা
শোধের বালাই নেই, ধার-
তা-ও আর বুঝলে হে জগন্নাথ, করতে হবে না।
এতে যদি কেউ বলে ফেলে তোমার মাথায় বাজ
পড়েছে, তাহলে বড্ড বাড়াবাড়ি হবে। সবই ফাঁকি, ফক্কিকার।

কী বললে? আপন হাতই জগন্নাথ? ছেঁদো কথা, ওসব চলে না
আর আজকাল।
নিজ চোখে দেখছ না এই জমানার হালচাল?
তোমার হাতের কাজ বন্ধ হলো বটে, তবে চোখ
দুটো তো আছেই, তুমি চেনা
সেই উপনিষদের দ্বিতীয় পাখির মতো শুধু চেয়ে চেয়ে
দেখবে, অন্যেরা সবকিছু করবে সকল ঋতুতে। যার ঝোঁক
রয়েছে যে-দিকে সেদিকেই যাবে দড়িবাঁধা রথ, তুমি মুখ
খুলবে, সে-পথ খোলা রাখিনি, বরং চুপচাপ খেয়ে দেয়ে
যাতে দিন নির্বিঘ্নে কাটাতে পারো, সুখ
চেখে তৃপ্ত হতে পারো, ব্যবস্থা নিয়েছি, অর্থাৎ যা যা পেতে
তা-ই পাবে অবিকল, এ ব্যাপারে পান থেকে চুন
খসবে না। ভাগ্যিস তোমাকে ঠা ঠা রোদে পুড়ে ক্ষেতে
লাঙল ঠেলতে বলা হয়নি, অথবা উঁচুনিচু পথে টেনে নিতে গুণ।

তাই বলি, অভিমানে মুখ অন্ধকার করে পথের কিনারে
একা বসে থেকো না, নিজের কর্মফল
ভেবে মেনে নাও সব। তোমাকে ভাগাড়ে
আমরা দিয়েছি ছুড়ে, এমন নাহক অভিযোগ
আমাদের পরম শক্রও করবে না। আর ধর্মের কল
বাতাসে নড়ে না ইদানীং; উপরন্তু বাঘের ঘরেই ঘোগ
বাসা বাঁধে, এসবও তামাদি হয়ে গেছে বহুদিন।
এভাবে তাকাচ্ছে কেন? তোমার হাতের স্রেফ দুটো,
বুঝলে হে জগন্নাথ, কব্জি কেটে ঠাঁটো
বানিয়েছি বৈ তো নয়। মিছেমিছি মুখ তুমি করো না মলিন।