চায়ের দোকানে বসে

চায়ের দোকানে বসে মেঘলা সন্ধ্যায় অকস্মাৎ সাধ হয়
রবীন্দ্রনাথের মতো চুলদাড়ি রেখে প্রেমিক সন্ন্যাসী হয়ে
রূপোর মতোন কিছু ভস্ম আলতো বুলিয়ে দিই রুক্ষ জীবনের গালে।
আমারও মুখমণ্ডলে উপনিষদের আভা বেশ
মিশ্চিন্ত করুক খেলা সারাবেলা, সাধ হয়। কয়েকটি
টক বিস্কুটের গুঁড়ো পড়ে থাকে বিবর্ণ পিরিচে।

উড়ছে গেরুয়া আলখাল্লা কালপুরুষের তলোয়ারে গাঁথা,
ধর্মকর্ম কতকাল করি না হে, বাতাসের কিছু কি
প্রবল নড়বে ভাবো কোনোদিন? বলা কওয়া নেই,
যেতে হয়, সবাইকে যেতে হয় শৌচাগারে আর শবাগারে।
চায়ের দোকানে বসে চেনা অচেনা মুখের ভিড়ে
এ রকম ভাবনার পাড়া ঘুরে বেড়াতে লাগে না মন্দ কখনো সখনো।

চায়ের দোকানে বসে মেঘলা সন্ধ্যায় খিস্তি খেউড়ের মাঝে
রবীন্দ্রনাথকে কেন টেনে আনা মিছেমিছি? বিশেষত তার চুলদাড়ি
বিষয়ে নীরব থাকা ভালো। অন্য কিছু ভাবা যাক, আমাদের দীর্ঘশ্বাসে
যাক বয়ে কিছু সিক্ত যুথী গন্ধ, মগজের অন্তর্গত আকাশে উড়ুক
আমাদের পোড়খাওয়া জীবনের বেদনার সাথী। যে বিদায় অকস্মাৎ
এসেছিল নেমে ভরসন্ধ্যার মতোন, তার কথা ভেবে নিজেকে
পোড়াই পুনরায়।
কেন তার কথা মনে পড়ে সারাক্ষণ, কেন? খোলা আকাশের
নিচে তার ওষ্ঠে, মনে পড়ে, খেলা করছিল সোমত্থ বিকেল,
তৃষ্ণার্থ যাত্রীর মতো আমি সেই ওষ্ঠস্থিত অপরাহ্ন চুমুকে চুমুকে
পান করতে গিয়ে প্রতিহত, হঠাৎ সে সরে গিয়ে বলেছিল
‘চুম্বনে আশ্লেষে শোনো, আমাকে খুঁজো না তুমি খুঁজোনা কখনো,
আমার আপন মনোলোকে আছো তুমি, থাকবে সর্বদা’।
ভিজিয়ে চোখের জলে সত্তা সে আমার হাত নম্র ছুঁয়েছিল,
তখন আকাশে ছিল বিদায়কালীন রুমালের মতো পাখি থর থর।
আমি সে ভুবনে আজ, মানে তার মনোলোকে, পড়ে আছি একা
(হৃদয়কে চোখ ঠারি) ছিন্নবেশ রুক্ষকেশ সন্তের মতোন উপবাসে।
আমাকে করছে রান্না সর্বক্ষণ ভীষণ আনাড়ি পাচকের মতো কেউ।
কে সে? কে সে? বলে আমি বিচ্ছেদের বালি মুখে পুরি চায়ের
দোকানে বসে
রবীন্দ্রনাথের মতো চুলদাড়ি রেখে প্রেমিক সন্ন্যাসী হয়ে যেতে চাই
দেশ দেশান্তরে বাদ্য বাজাতে বাজাতে পথপ্রান্তে নদীতীরে, ফুটপাতে, টার্মিনালে
এবং ছড়াতে চাই ভস্ম জীবনের মুখের উপর, মরণের চোখে,
(মরণরে, হে মোর মরণ)
দুনিয়াদারির কোনো তোয়াক্কা না রেখে অলৌকিক জমিদারি
ঔদাস্যে বেড়াই খুঁজে, এক জোড়া রণপা কোত্থেকে এসে যায়।

স্বপ্নের মতোন ভেসে ওঠে পথরেখা, ছিন্ন স্মৃতির মতোন দৃশ্যাবলী,
আমি ফুটপাত, এ্যাভিনিউ, মজা খালবিল লঞ্চ টার্মিনাল,
বাস ডিপো আর বনবাদাড়, আঁধার জমিজমা, চকচকে
ফ্ল্যাটে আর কোঠাবাড়ি, গোচারণ ভূমি
পায়ের অনেক নিচে রেখে হেঁটে যাই, হেঁটে যাই, হেঁটে যাই
কেমন চিত্রিত মুখে, মাথার উষ্ণীষ মেঘলগ্ন;
কেবল জ্বলতে থাকে মাথার উপরে ধ্রুবতারার মতোন তার চোখ,
বিপরীত জীবনের লোভ। বেলাশেষে লঘু প্রজাপতিদের
মোহন বিক্ষোভ দেখে লাস্যময় সময়ের কথা ভাবি, ভাবি
কোন পথ কোন দিকে যায়, কতদূর যায়? বিপুল জ্যোৎস্নায়
কাক কেন মাথা কোটে বৃক্ষমূলে পত্রালি অস্থির কেন হয়?
আমার বিরুদ্ধে কেন কথা বলে বারংবার আমারই হৃদয়?