ছেলেবেলা থেকেই

ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি
ভারি দুঃখ পাই।
একটি রঙিন বল একদা কলকাতা থেকে এনে
আব্বা উপহার দিয়েছিলেন আমাকে,
একদিন সে-বল কোন শীতের বিকেলে
ছাদ থেকে প’ড়ে
গড়াতে গড়াতে
গড়াতে গড়াতে
কোথায় অদৃশ্য হল, পাইনি কখনো আর খোঁজ।
ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি
ভারি দুঃখ পাই।

একটি সফেদ হাঁস ছিল ভ্রাম্যমাণ
উঠোনে অথবা বারান্দায়,
ছিল শৈশবের ছায়ায় আমার গৃহপালিত রোদ্দুরে আর
আমার সবুজ স্নেহ খেত প্রতিদিন খুদকুড়োর সহিত।
ক্ষুধার্ত প্রহরে
একদিন সহসা তার পালকবিহীন
কতিপয় লালচে ভগ্নাংশ
খাবার টেবিলে এলো ভয়ানক বিবমিষা জাগিয়ে আমার।
ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি
ভারি দুঃখ পাই।

নেহার, আমার বোন, সত্যেন দত্তের ছিন্নমুকুল পড়ার
বয়সে আঁধারে ঝরে আমার ভেতর
অতিশয় কালো বৃষ্টি সে কবে ঝরালো,-
কিছুদিন আমি খুব একা বোধ করেছি একেলা।
ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি
ভারি দুঃখ পাই।
অরুণ, সুনীল, সুবিমল, সূর্যকিশোর, তাহের,
শিশির, আশরাফ আজ কয়েকটি নাম, শুধু নাম,
মাঝে-মধ্যে জোনাকির মতো জ্বলে আর নেভে।
ধূসর কিশোর সব সহপাঠী কোথায় যে করেছে প্রস্থান।
ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি
ভারি দুঃখ পাই।
আমার মনের সাদা ক্রমাগত কালোর দখলে
যাচ্ছে চলে, যাবে।
সম্প্রতি পীড়িত পাপবোধে; হে সময়,
কখনো তোমার প্রতি উদাস বিলাপ
করি নিবেদন।
ভাঙা মিছিলের মতো একেকটি আমি
দিকচিহ্নহীন পথে পলাতক, আজ অন্য আমি হয়ে আছি।
ছেলেবেলা থেকেই কিছু না কিছু সহসা হারিয়ে ফেলে আমি।
ভারি দুঃখ পাই।

তোমার সান্নিধ্যে কিংবা তুমি হীণতায়
কাটে বেলা; পরিত্যক্ত নিঃসঙ্গ সৈনিক
যেমন কম্পিত হাতে রণক্লান্ত ঠোঁট রাখে শেষ সিগারেট
তেমনি আঁকড়ে ধরি আজকাল একেকটি দিন আর ভাবি,
সহসা তোমাকে হারানোর দুঃখ যেন, হে মহিলা,
কখনো বা পাই।