ডাক

কনকনে হাওয়া চাবকাচ্ছে শহরটাকে
দারুণ আক্রোশে। রাত্রির পাখিরা নিশ্চুপ; আমার ঘরে
বাতি নেভানো। টেলিফোনের
ডায়াল ঘোরাতে ঘোরাতে অঙুল
টনটন করছে। জানি, ইচ্ছে ক’রেই তুমি
রিসিভার তুলছো না, যেন ভুলেই গ্যাছো
টেলিফোনের ব্যবহার। আমার হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রী
তোমাকে ডাকছে, তুমি নিঃসাড়।

মাঝে-মাঝে তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই,
সর্বক্ষণ কেন পাই না, এ আক্ষেপ আমাকে
কাতর করেছে কতোদিন।
কিন্তু আজ রাতে
একটি বারও তোমার কণ্ঠস্বর বীণা হ’য়ে
বেজে উঠলো না আমার কানে। আমার ব্যাকুল আহ্বান
মুখ থুবড়ে পড়ছে ইথারে; তোমার
একরোখা রিসিভার কানে সজোরে
আঙুল চেপে ধরেছে।

অবাধ্য আমার মন আহত ঈগলের মতো
রক্তাপ্লুত ডানা ঝাপটাচ্ছে তোমার সাড়া না পেয়ে।
পার্বত্য এলাকার নির্যাতিত আদিবাসীদের বিষাদ
আমাকে দখল করেছে। আমার
বেদনার কূলকিনার এই মুহূর্তে দিশেহারা, মনে হচ্ছে আমি
পদ্মার চরে ক্ষ্যাপা বাউলের মতো
ছেঁড়া একতারা নিয়ে গেয়ে বেড়াচ্ছি
অবোধ লালন একবার দেখ নয়ন খুলে’
সুপ্রিয়া, আজ তুমি রিসিভার তুলছো না,
অথচ একদিন আমাকে টেলিফোন করে জানতে চাইবে,
‘কেমন আছো কেমন চলছে লেখালেখি?’ ও-পার থেকে
ভিন্ন কণ্ঠস্বর উচ্চারণ করবে, ‘আপনি খবরের কাগজ
পড়েননি? তিনি গত রাতে…’ বাক্য শেষ না হতেই
তোমার হাত থেকে ঝরে পড়বে রিসিভার। তখন আমাকে এই শহরের
রাস্তায়, কাফেতে, বইয়ের দোকানে পঞ্চভূতে-
কোথাও ডেকে ডেকে কোনো সাড়া পাবে না।

২৫/১/৯৫