দাড়ি কামাবার মুহূর্তে

দাড়ি কামাতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেলো কেন তোমার
সেফটি রেজর? ইতোমধ্যেই সাবানের ফেনা
শুকিয়ে গ্যাছে, চড়চড় করছে গাল। সাত সকালে
কী ভাবছো তুমি? রেশনের চাল?
বাজারের ডাল? বীমার কিস্তি? ছেলেবেলার ভিস্তি?
নাকি মরা ইলিশ মাছের মতো
আঁশটে প্রেমকথা? বার্ধক্যের ফিকে
সুবে সাদিকে তুমি কি ভাবছো
তাকে, যে আবার হলো অন্তঃসত্ত্বা
সুদূর ঝিলিমিলি প্রবাসে।

বাইরে চমৎকার রোদ উঠেছে
প্রিয় স্মৃতির মতো। গৃহিণীর সিঁথি
ক্রমাগত চওড়া হচ্ছে। তোমার নিজের মাথায় খুশ্‌কি,
মুখে মেচেতা। এই মনোরম সকালে এখন
কোথায় সুচেতা?

নাও, ঝটপাট দাড়ি কামিয়ে ফেলো, দেখছো না
বাড়ছে বেলা, অফিসে কলম পিষে
শ্লথগতি রিক্‌শার মতো দিচ্চো জীবন কাবার করে,
ক্রমাগত এদিকে আবার পদ্য লেখার বাতিক
মজ্জাগত, দিস্তা কাগজে তুমি সাজাও কবিতার গুল্‌দস্তা।
টালমাটাল দু’ নৌকায় পা দিয়ে উত্তাল
ভবসাগর দিচ্ছো পাড়ি বরাবরই। উনুনে হাঁড়ি
চড়ুক আর না-ই চড়ুক, সন্ধ্যার আড্ডায়
সাত তাড়াতাড়ি যাওয়া চাই, থাকা চাই
হররোজ ধেনো মদ, নইলে মেজাজ
শরীফ রাখা দায়। জাঁহাবার মারী ও মড়কে
অলিতে-গলিতে, সড়কে, বস্তিতে, কলোনিতে
উঠলে কান্নার রোল, তোমার খানদানী মস্তিতে
চিড় ধরে; মাঝে মধ্যে তার চিহ্ন বটে তোমার পদ্যে
মৃতের চোখের মতো নাছোড় গেঁথে থাকে।

যত রটে, তত ঘটে না, মাথা নেড়ে নেড়ে
বলেন বিজ্ঞজন।

এবার পাঞ্জাবি চাপাও গায়ে কিছু নাকে-মুখে গুঁজে
ধাও, তুমি ধাও দপ্তর-বন্দরে, হে পথচারী,
মিশে যাও জনস্রোতে। এখনো
কী ভাবছো চোখ বুঁজে? ভাবছো কি কূপমণ্ডূক এ সমাজকে
কে শোনাবে সমুদ্র-কল্লোল? কে আনবে ইন্দ্রধনুচ্ছটা
সংস্কারের বদ্ধ ডোবায়?

এসব কেতাবী কথা
বস্তুত বাচালতা, আপাতত
তোলা থাক মনের কুলুঙ্গিতে। তোমার নিজের ঘরের ভিতে
ভাঙ্গন বাজাচ্ছে ঢাক গুড় গুড়, শুনতে
পাচ্ছো কি? দিনে খাচ্ছো ডালভাত, শাক-সবজি,
মাঝে মাঝে মাছ কিংবা গোস্ত, রাতে চাপাতি;
বেশতো আছো
দোস্ত, তাহলে খামোকা কী কাজ
দাড়ি আমাতে গিয়ে আজ হঠাৎ রেজর নিস্ক্রিয় রেখে
আকাশ পাতাল ভাববার?
দিও না কান
প্রেতের ফিসফিসানিতে, বরং পুরোনো দিনের
গান গাও গুনগুনিয়ে এবং
রেজর চালাও গালে সুখে। আয়ুর
মরীচিকা করুক ধুধু,
তুমি শুধু কোনোমতে কষ্টে সৃষ্টে বাঁচিয়ে রাখো
বুকের সেই কোকিলটিকে, যার কোনো আগ্রহ নেই
কারুর বাঁধা মাসোহারার প্রতি।