দেখার ধরন

কোনো কোনোদিন প্রাত্যহিক আচ্ছাদন কী প্রবল
বিস্ফোরিত হ’লে অস্তিত্বের কিছু খোসা ঝ’রে যায়,
অনেক গভীর থেকে ছবি উঠে আসে কতিপয়,
চোখের ভেতরে অন্য চোখ গান গায়, ওষ্ঠে ভিন্ন
দৃষ্টি ফোটে বসন্ত দিনের মতো, সব বড়ো বেশি
ওলট-পালট হয়ে যায়। মাথার ভেতরে কত

পেঁচানো জটিল দৃশ্য ভাসমান-আগুনের ধারে
যৌথ নৃত্য গাছে নড়ে অনেক মুখোশ, জলাশয়ে
বিম্বিত চুম্বন আর গোধূলি-জোয়ারে ভেজা এক
প্রাচীন প্রাসাদে কলরোল, নগ্ন পাত্রে সন্ন্যাসীর
কী দিব্য খন্ডিত মাথা, নর্তকী বিভ্রমে পাক খায়,
যেন সে লাটিম। কোনো কোনোদিন এরকমভাবে

অনেক গভীর থেকে ছবি উঠে আসে-মনে হয়
যেন আমি দূর গলগোথায় ছিলাম সেই ক্ষণে,
যখন মাধ্যাহ্নে দ্রুত সন্ধ্যা নেমেছিলো; মনে পড়ে
কোন্‌ সে নিশীথে সুরভিত ঘরে ম্যাগডালীনের
উত্তপ্ত অধরে আমি ওষ্ঠ রেখেছিলাম এবং
মনে পড়ে আমার বাঁশির সুরে পশু-পাখি এসে
জমতো আমার চতুষ্পার্শে কী বিহ্বল, নদীতীরে
আমার আপন ছিন্ন শিরে বয়ে যেতো গীতধারা।

নিজেরই অজান্তে এক দেখার ধরন জন্মে যায়
বেলাবেলি, স্বপ্নে হাঁটে গোধূলিতে দেখা
বৃক্ষশ্রণী, ভাসে বলাকার প্রেত, অভ্রের মতন
গুঁড়ো হ’য়ে নড়ে ক্লিওপেট্রার কবর, ফসলের
ক্ষেতে ওড়ে ডন জুয়ানের প্রস্তরিত ডান হাত;
পেছনে পেছনে আসে প্যানের স্পন্দিত কর্ণমূল।।

কোনো কোনোদিন প্রত্যহের অন্তরালে এরকম
মোহ তৈরি হয়, যেন আমার নিজের থেকে আমি
সহজে বেরিয়ে গিয়ে শজারুর মতো অন্ধকারে
করে ফেলি সাবলীল তারার আঞ্জাম। তাকালেই
দৃশ্যাবলি-আমার গতায়, পিতা আবরে বিছিয়ে
কোমল জায়নামাজ উদাস ভ্রমণকারী, তিনি
কী যেন আঁকেন আসমানে। তাঁর হস্তধৃত নীল
তশ্‌তরিতে সেজানের ফল। চকিতে কুকুরীগুলি

জলকন্যা হ’য়ে নামে শহুরে নদীতে; নিশীথের
শূন্য ডাকঘর বোধিদ্রুম যেন, আনন্দ, সুজাতা
চেয়ে থাকে অপলক। সুদূর শতক আজকের
রবিবার বুধবার হ’য়ে রাজহাঁসের গ্রীবায়,
বাস টার্মিনালে, কলোনীতে, তরুণীর ন্ত্রেপাতে
আর গিরগিটির নিশ্বাসে হু হু দীর্ঘ বয়ে যায়।