ধৈর্যশীল চোখ

ঋতুতে ঋতুতে সূর্য ঠোকরায়, বৃষ্টি আঁচড়ায় যথারীতি
বাড়িটাকে, ছাদের কার্নিশে
পাখি এসে বসে, ডাকাডাকি
করে, ঘরে লেখে একজন,খাতার পাতায় তার
অদৃশ্য মঞ্জীর
বেজে যায়, ঝরে কত নিবিড় আবীর। ট্যাপ থেকে
পানি পড়ে গোসলখানায়, পরীক্ষার্থী পদ্য পড়ে,
কেউ চুল মোছে সদ্য-কেনা তোয়ালেতে, খেতে বসে
ব্রেকফাস্ট কেউ,
কেউ-বা কামাচ্ছে দাড়ি সাত তাড়াতাড়ি, অফিসের
তাড়া আছে। আজকের কাগজটা কই?
আধুনিক কবিতার বই টেবিলে প্রহর যাপে।

ফেরিঅলা ডেকে যায় দুপুরকে উদাস বিধুর
ক’রে দিয়ে, কোনো দরজায় চলে
দর কষাকষি, লেখা ছেড়ে উঠে পড়ে
সেই একজন, বেলা বাড়ে, রেডিওতে হাসন রাজার গান;
মনের ভেতরে তার ভিন্ন ঘরবাড়ি,
লতাগুল্ম ঢাকা,
ছাদ আর দেয়ালবিহীন, মাথা তোলে
দেবতার মতো।
সে যায় নিঃশব্দে হেঁটে বারান্দায়, তাকায় দূরের
আকাশে এবং নীলিমাকে ছন্দের ধরনে করে
বিশ্লেষণ, তার হৃদয়ের কাছে কারো
হাত নুয়ে পড়ে, যেন পুকুরের ছলছলে জলে তন্বী ডাল।

বাড়িটার বয়স অনেক হলো নাকি? ছেড়ে চলে
যেতে হবে কে জানে কখন। বারান্দাটা ঠিকই আছে
আগেকার মতো, মাঝে মাঝে চাপা কান্না বেরোয় দেয়াল থেকে;
ছাদ থেকে পানি পড়ে, ভরা
বর্ষায় আগেও ভেসে যেতো মেঝে, দরজা জানালা
তেমনি আছে, কুলুঙ্গিতে তোলা থাকে কুপি,
শাড়ি নড়ে চৈত্রের দুপুরে;
শুধু যে জানালাটায় চকিতে উঠতো
ভেসে রোজ কোমল মুখশ্রী,
সে আর দেয় না খুলে তার বুক হাট ক’রে সকাল-সন্ধ্যায়;
অথচ সেদিকে তবু চেয়ে থাকে একজোড়া ধৈর্যশীল চোখ।