দু’দিক থেকে

প্রথম দিন যে জায়গাটায় মুখোমুখি
বসেছিলাম তুমি আর আমি,
আজ এতদিন পরে আবার সেখানেই
আমরা দু’জন এসে বসলাম দু’টি চেয়ারে
প্রায় একই ভঙ্গিতে। সেদিন ছিল
গোধূলিবেলা আর আজ রাত্তির।

সেদিন আমরা দু’জনই
নিজেদের আড়াল করে রেখেছিলাম
সযত্নে, অজান্তেই হয়তো মুখে
টেনে নেয়া হয়েছিল মুখোশ। ভব্যতার বড় দায়।
সেদিন আমরা কথা বলেছি
ঠারে-ঠারে, অথচ আজ
আমাদের মুখ ও মন জুড়ে, কোনো মুখোশ নেই। জানালা
খুলে রেখেছি, আসুক যত হাওয়া,
রোদ, জ্যোৎস্না, কুয়াশা,
বৃষ্টির ছাঁট, ঝিঁঝির ডাক, জোনাকি।

আমরা দু’জন দু’দিন থেকে এসেছি-
তোমার শাড়ির পাড়ে গোধূলিরঙ, চুলে
আটকে রয়েছে রাত্রির কালো, স্তনাগ্রে সোনালি মৌমাছির গুঞ্জরণ
আমার ট্রাউজার্স দোয়েলের একটি পালক, ধূসর
পুলওভারে হলদে পুষ্পরেণু। মুহূর্তগুলোকে
আকণ্ঠ পান করছিলাম সুরাপায়ীর মতো।

প্রথম দিন আমাদের কারো মনেই হু হু করেনি
বিচ্ছেদের ভাবনা; সেই অস্পষ্ট গোধূলিতে
জানতে পারিনি কাকে বলে প্রকৃত বিরহকাতরতা। অথচ
আজ রাতে আমরা কেবলি
বিষণ্ন হয়ে পড়ছি
আসন্ন বিচ্ছেদের কথা ভেবে। তুমি তোমার
অন্তরে একটি হরিণীর আর্তনাদ শুনতে পেলে
আর আমি একজন প্রায়ন্ধ বাউলের
করুণ দোতারার সুর হয়ে উঠলাম ক্ষণে ক্ষণে। আমরা
দু’দিক থেকে এসেছি, দু’দিকেই চলে যেতে হবে।