এ দূয়ের মধ্যে

অনলে যায় নি পুড়ে ঘর, তবু কেন অনিকেত মনে হয়
নিজেকে সর্বদা? কিছু রঙ
দৃশ্যমান হ’য়ে ফের কোথায় মিলিয়ে যায়, শুধু
স্মৃতি অন্তঃস্রোত চিরদিন। চাই কি না চাই, স্মৃতি
আমাকে দত্তক নিয়ে খেলা করে নিমগাছ অথবা ডুমুর
গাছের তলায়, কখনো-বা হাত ধ’রে
নিয়ে যায় পুরানো সে দিঘির কিনারে
শালুক কুড়াতে কিংবা পোড়ো-বাড়িটার রূপ গোপনে দেখাতে।

কোনো কোনোদিন অকস্মাৎ
জন্ম-জন্মান্তার পাড়ি-দেয়া আশ্চর্য চোখের
পাখি
নেমে আসে আমার প্রাঙ্গণে, জবাফুলে
ঢেলে দ্যায় কত আকাশের নীল, প্রান্তরের ধু ধু;
আশীর্বাদে তার লহমায়
কেমন রঞ্জিত চতুর্দিক, গৃহহীনতার শূন্যতার গুঢ়
কী এক কাঠোমো
স্তরে স্তরে নির্মাণের সখ্য লাভ করে। পাশে থাকে
উজ্জ্বল মগ্নতা;
ছবি ভেঙে ছবি হয়। কোনো ধ্বনি দুপুরকে, কোনো
ঘ্রাণ মধ্যরাত্রির গহন স্তব্ধতাকে
ডেকে আনে; হৃদয়ের ভেতরে নিঝুম শ্রাবণের কোলাহল
কতবার ফিরোজা রঙের এক ঘরের ভেতরে, মনে হয়
দেখেছি তোমাকে;
তখনও ছাড়ো নি ফ্রক। যখন পুতুল
বর-কনে হয়ে যেতো খেলা-খেলা ঘটকালি শেষে, অকস্মাৎ
আবীরে বাসর-ঘর রাঙা
প্রবালপুরীর প্রতিচ্ছবি। সানাই উঠতো বেজে
গোলাপি, বেগনি বৃত্ততৈরি ক’রে ছেলেবেলাকার। দেখতাম,
সরৎকালীন জ্যোৎস্না তুমি ঘরের মুঠোয়।

তোমার প্রথম শাড়ি শরীরে জড়িয়ে তুমি যেদিন চকিতে
আমার স্বমুখে তন্বী গাছের ধরনে
সলাজ দাঁড়ালে এসে, দেখলাম নীলাম্বরী-পরা
আনন্দের অজস্র কনকচাঁপা সাজিয়ে ছিলাম? অভ্যর্থনা
প্রত্যাশী সহজ কুঁড়ি যদি অন্তরালে
ফুল হয়ে ওঠে,
কে পারে নিঃসাড় থেকে যেতে? ভালো ক’রে
দেখার আশায় আমি চক্ষু যুগলকে
তাড়াতাড়ি আরেক ফুলের
বিকাশ দিলাম। তবু বিষাদ আমাকে তার পাশে
বসিয়ে একাকী কারো অন্তর্ধানের কাহিনী খুব
নিবিষ্ট শুনিয়ে
ঝরাপাতাদের কাছে নিয়ে গিয়েছিঁলো।
প্রত্যহ আমাকে ভাগাভাগি ক’রে নেয়
বাস্তব এবং পরাবাস্তব-এই যে কিছু চ’লে-যাওয়া আর
কিছু চলে-আসা,
এ দুয়ের মধ্যে আমি অনিকেত কেমন ধূসর ব’সে থাকি।।