একবার নিশীথের প্রথম প্রহরে

একবার নিশীথের প্রথম প্রহরে প্রিয় ঢাকা
শহর ভ্রমণে বের হ’য়ে
অপরূপ যে সৌন্দর্য তার দেখলাম,
বলা যেতে পারে,
তাক লেগে গেলো, চোখ দুটো কিছুতেই ঝলমলে
আলো মালা, মোটর কারের মিছিলের
ঝাঁঝালো বহর থেকে সরাবার সাধ জাগার উপায়
ছিল না বস্তুত কারও। এ শহর সত্যি কি আমারই জন্মস্থান?

সুসজ্জিত প্রতিটি দোকানে নরনারীদের ভিড়, লকলকে
ক্রয়স্পৃহা চরিতার্থ করার রসদ
থরে থরে সাজানো শো-কেসে। কেনাকাটা
চলছে বেদম, দূর থেকে চেয়ে থাকি বিস্ময়ের
ডালা খুলে, তারপর যথারীতি চোখের খোরাক নিতে-নিতে
ধীরে সুস্থে এগোই আরেক দিকে। ভাবনার মেঘ
ক্রমশ জমতে থাকে মনের আকাশে। কিয়দ্দূরে বুড়োসুড়ো
একটি অসুস্থ লোক দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে পথে
পড়ে আছে বড় একা। থামছে না কেউ তাকে দেখে,
বাজে দৃশ্য দেখবার মতো ফুরসৎ এ শহরে নেই কারও!

এ শহরে আলোর আড়ালে নানা দিকে ভয়ঙ্কর অন্ধকার
জাঁকিয়ে বসেছে জাঁহাবাজ মোড়লের মতো আর
বহুরূপী মারণাস্ত্র প্রায়শ ঝলসে ওঠে অলিতে গলিতে,
এমনকি ঝলমলে দ্বিপ্রহরে রাজপথে। সে কার সঙ্কেতে?
হায়, সেই রহস্যের হয় না সহজে উন্মোচন। কেউ কেউ
জানলেও কখনও খোলে না মুখ স্ত্রী-র আশু বৈধব্যের ভয়ে!

আমরা তো দিব্যি আছি আমাদের এই প্রিয় সোনার বাংলায়
তুমুল বাজিয়ে ব্যান্ড, নেচে গেয়ে, বোমার ঝলক দেখে আর
কাগজের প্রত্যহ খুনখারাবির লোমহর্ষক খবর পড়ে-
আমাদের জাতীয় কর্তব্য বটে বাৎসরিক
মরণোৎসবের দিন স্থির ক’রে নিয়ে বাজনা বাজিয়ে আর
পরস্পর গলাগলি ক’রে খুনিদের বেহেস্ত কামনা করা!

১৩-১২-২০০২